শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণে উত্তাল ক্যাম্পাস: ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ

অনলাইন ডেস্ক: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণ হওয়া ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও সড়ক অবরোধ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি, ‘ ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নো মার্সি টু রেপিস্ট’, ‘ধর্ষকের — কেটে দাও,’ ‘তনু তানিয়া নুসরাত—এরপর কে’। ক্যাম্পাসে দিনভর শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্লেকার্ড নিয়ে মিছিল সমাবেশ করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল বিকালে ধর্ষনের ঘটনাস্থল শেওড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আর্মি গলফ গার্ডেনের সামনে বিমানবন্দর সড়ক প্রায় ঘন্টা সময় ধরে অবরোধ করে রাখে। গত রবিবার (০৫ ডিসেম্বর) রাতে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীকে দেখতে গিয়ে ঢাবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ধর্ষকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। রবিবার রাতের এ ঘটনার পর সোমবার সকালে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৩০-৩৫ বছরের এক যুবককে আসামী করেছেন। গতকাল সিআইডি’র ক্রাইম সিন বিভাগ ঘটনাস্থল ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের আগে আর্মি গলফ গার্ডেনের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ঝোপঝাড় থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। ভিকটিমের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। ঘটনাস্থলের বর্ণনা বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের ফুটপাত ধরে তিনশ’ গজ হাঁটা পথে ঘটনাস্থলটি মিলবে। পালম ভিউ রেষ্টুরেন্টের প্রবেশ গেটে পাড় হয়ে শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের সামান্য আগে ফুটপাতের পাশেই ঝোপঝাড়। ফুটপাত থেকে ঝোপঝাড় পেরিয়ে অন্তত ২০ গজ দূরে আর্মি গলফ গার্ডেনের সীমানা দেয়াল। দেয়াল থেকে উপরে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু লোহার নেট দেয়া আছে। এলাকাটি আগে থেকে ভবঘুরে, মাদক সেবীর আড্ডাস্থল ছিল। সেনা গলফ গার্ডেন সন্নিকটে এ ঘটনা ঘটলেও এলাকায় সব সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের আনাগোনা রয়েছে। তবে রাতে এলাকায় পায়ে হেঁটে সাধারণ মানুষের চলাফেরা খুব কম। এর আগে ঘটনাস্থলের অদুরে কুড়িল ফ্লাইওভারের এক গারো তরুনীকে ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ভবঘুরে মাদকসেবী অপরাধির উপস্থিতি রয়েছে। ফুটপাত সংলগ্ন ঝোপঝাড়ের ভিতর ঘটনাস্থলটি। গতকাল সকালে পুলিশের একটি টিম ঝোপঝাড়ে তল্লাশি করে ধর্ষণের ঘটনাস্থলটি খুঁজে পায়। সেখানে তখনও ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর ইনহেলার, ক্লাসের নোটবুক, লেকচার শিট, চাবির রিং, একখন্ড পোষাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। সেখানে একটি কালো রঙের জিন্স প্যান্ট ও এক জোড়া জুতা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের ধারণা, জিন্স প্যান্ট ও জুতা ধর্ষকের হতে পারে। পরে সিআইডি’র ক্রাইম সিন টিম উপস্থিত এসব আলামত জব্দ করে। শিক্ষার্থী জানায় ‘আমি বাস থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে নেমে হেঁটে ফুটপাত ধরে সামনের দিকে বান্ধবীর বাসার দিকে আগাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে পেছন থেকে কেউ একজন এসে আমার মুখ চেপে ধরে। কোন কথা বলতে পারছিলাম না। তবে যে আমার মুখ চেপে ধরে তার চেহারাটা এক পলকে দেখেই জ্ঞান হারাই। পার্শ্ববর্তি ঝোপের আড়ালে নিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে চেতনা ফিরলে আমি নিজেকে নির্জন স্থানে আবিস্কার করি। সেখানে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শেওড়ায় বান্ধবির বাসায় পৌছে তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। রাত ১২টার দিকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় হলে এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয় আমাকে।’ এভাবেই পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার বর্ণনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মেয়েটির বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনায় একজন জড়িত থাকতে পারে। তবে ঘটনায় একজন নাকি একাধিক জন ছিলো সেইটার তদন্ত চলছে। তবে ধর্ষণের ঘটনায় একজন অপরাধী, তাকে শনাক্ত ও ধরার চেষ্টা চলছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করছি ধর্ষককে গ্রেফতার করার জন্য।’ শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানায়, রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাস থেকে কুড়িলের শেওড়া জময রোডে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য ক্ষণিকা বাসে উঠেন ওই ছাত্রী। কিন্তু সন্ধ্যার পর ভুল করে শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে না নেমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে গতিরোধকের কাছে তিনি বাস থেকে নামেন। এরপর হাসপাতালের ফুটপাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন। এরপর শেওড়া বাসস্ট্যান্ডের আগে ফুটপাতে অজ্ঞাত যুবক তার মুখ চেপে ধরে ঝোপঝাড়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ৮ টার মধ্যে ঘটে। রাত ১০ টার দিকে শিক্ষার্থীর চেতনা ফিরে পেলে, তিনি একটি অটোরিকশায় তার বান্ধবীর বাসায় যান। ধর্ষণের আলামত মিলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন ওই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। তবে ধর্ষণের ঘটনায় এক না একাধিক ব্যক্তি জড়িত কিনা তা নিশ্চিতে ওই শিক্ষার্থীর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুপুরে ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষার পর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকরা তার নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। তবে প্রতিবেদন কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, মেয়েটিকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে চিকিৎসা চলছে। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফকে প্রধানকে। এছাড়া ফরেনসিক বিভাগ, ইএনটিসহ অন্য বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন বোর্ডে। সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, তার (ছাত্রী) গলার দুই পাশে নখের আঁচড় দেখা গেছে। গলা চেপে ধরার কারণে কথা বলতে একটু তার কষ্ট হচ্ছে। নাকের উপরেও নখের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, মেয়েটির কিছু আঘাত হয়েছে ধর্ষণকারীর দ্বারা, আর কিছু আঘাত হয়েছে ঘটনাস্থলের কারণে। জঙ্গলের কারণে তার পায়ে কিছু আঘাত রয়েছে। বোঝা গেছে যে ধর্ষণকারী তার গলা টিপে ধরেছিল। হাতেও একই ধরনের চিহ্ন আছে যেটা থেকে অনুমিত হচ্ছে যে তাকে জোর করে আঘাত করা হয়েছে। লাথি মারা হয়েছে এরকম আঘাতের চিহ্নও রয়েছে শরীরে। হাসপাতালে তার ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডাক্তার বিলকিস বেগম বলেন, ওই ছাত্রীর চিকিৎসার বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি আমরা। মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর রেডিওলজি (বয়স নির্ধারণ) পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত ক্রমে আরো কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। মেয়েটি অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষায় তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মানে ঘটনার সময় ধর্ষক তার গলা চেপে ধরেছিল। এই কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও মেয়েটির কথা বলতে একটু কষ্ট হচ্ছে। বোর্ডের সদস্য নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে দেখেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতনরা বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনায় জড়িত অপরাধিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ঘটনাটি শুনেছি, মেয়েটি বেশ রাতে ফিরেছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের কয়েকটি টিম এ নিয়ে কাজ করছে। তবে আমরা এখনও সুনিশ্চিত নই, কি কারণে, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। গতকাল সোমবার বিকালে রাজারবাগ পুলিশে লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়াারীসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস এলাকা। গতকাল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই প্রতিবাদে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেয়। এসময় তাঁরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড বহন করে। বেলা একটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বড় মিছিল বের করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগ। বেলা ১১টায় টিএসসি থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বেলা ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেতা-কর্মীরা বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। বেলা ২টায় অবরোধ তুলে নেয় তারা। এদিকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় ধর্ষণের বিচারসহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে রবিবার রাত থেকেই অনশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুললে ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। গতকাল সকালে তাঁর সঙ্গে অনশনে যোগ দেন সাইফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান নামে আরও দুই শিক্ষার্থী। রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শাহেলা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ধর্ষণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমরা চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে যারা ধর্ষণ করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের বহনকৃত ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘ধর্ষণ করতে বর্জন, ঢাবি করো গর্জন’, ‘স্বাধীন দেশে আর কত?’, ‘আমি বাংলাদেশ, আমি লজ্জিত’, ‘বাঙালি অভিধানে আর থাকবে না ধর্ষণ’ ইত্যাদি। ছাত্রলীগের বিক্ষোভ: এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগ। রবিবার দিবাগত রাত ৩টার পর ঘোষণা দিয়ে সোমবার বেলা ১১টা থেকে টিএসসি এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এসময় বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। কুর্মিটোলায় বিক্ষোভ: বিকেল সাড়ে তিনটায় অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থলের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাসে করে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মানববন্ধন করেন। পরে তাঁরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন। উপাচার্যের আশ্বাস: এদিকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর পাশে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োজন তাই করবে। তাকে মনে রাখতে হবে সে আমাদের মেয়ে, আশা রাখি তার মনোবল শক্ত থাকবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। উপাচার্য বলেন, ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়, দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। আমরা মর্মাহত। ডাকসুর কর্মসূচি: এদিকে হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ডাকসু। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় মোমবাতি প্রজ¦লন ও মৌন মিছিল নিয়ে ডাকসু থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্য যাত্রা করে তারা। এসময় মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ ডাকসু নেতৃবৃন্দ। এরপর রাত ৯টায় স্বরাষ্টমন্ত্রীর সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। আজ বিকেল ৩টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক সমাবেশ ও সন্ধ্যা ৬টায় নিপীড়ন বিরোধী ডাকসু মঞ্চ থেকে ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ করার কথা রয়েছে। সিলেটে এমসি কলেজে বিক্ষোভ সিলেট অফিস ও দক্ষিণ সুরমা সংবাদদাতা ঃ শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে সিলেট এমসি কলেজে সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে শিক্ষার্থীরা। মিছিলে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও তালামীযে ইসলামিয়ার নেতাকর্মীরা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন মোহনা, থিয়েটার মুরারিচাঁদ, মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ, রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাও মিছিলে অংশ নেয়। বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস/আহসান শিপু

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.