শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ব্যাংকের বৈদেশিক ঋণ, ৪ বছরে বেড়েছে ৬০০ কোটি ডলার

  • অনলাইন ডেস্ক

বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কাটছে না দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। গত ৪ বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলো থেকে। যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তাই বৈদেশিক ঋণ কমাতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘প্রসপেক্টাস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব শর্ট টার্ম ফরেন কারেন্সি ফিন্যান্সিং অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বেসরকারি খাতে ২০১২ সালে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৩ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ডলারে। সর্বশেষ হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি ডলার। এই হিসাবে, গত ৪ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৯৩ কোটি ডলার।

বৈদেশিক ঋণ অনেক ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে এতে আরো বলা হয়, ঋণের এই বোঝা আগামী দিনে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তাই এখনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, স্বল্প মেয়াদী এসব ঋণের বিষয়ে নজরদারির অভাব রয়েছে। এ সুযোগে বিশেষ থেকে আনা এসব অর্থের অপব্যবহারও হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরণের সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে দেশ। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি নীতিমালার আওতায় এ ধরণের ঋণের নজরদারি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, দেশে যখন উচ্চ সুদহার ছিল। তখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসময়ে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার ছিল ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু এখন তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে বিদেশি ঋণের সঙ্গে দেশিয় ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহারের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।তিনি বলেন, দেশের তুলনায় বিদেশি ঋণের সুদহার তুলনামূলক সস্তা হলেও সীমাহীন ঋণের অনুমোদন দেওয়া হবে না। কেননা, পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে।

বিদেশি ঋণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, মালেয়েশিয়া স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরণের ঋণ বিপজ্জনক। এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে যেসব ঝুঁকি আছে, তা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বলমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের ভালো দিকের পাশাপাশি বেশকিছু ঝুঁকিও রয়েছে।

‘আমরা যদি বৈশ্বিক চিন্তা করি, তাহলে দেখব, আগে যতগুলো ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইসিস হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি ঋণ কম খরচে বড় করা হয়। বড় করে যখন ফিরিয়ে দেয়ার সময় আছে, তখন লোকাল কারেন্সি অবমূল্যায়ন হলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে সমস্যা দেখা দেয়।’

তিনি বলেন, ব্যাংকিংয়ের সোর্সেস অব ফান্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে সবসময় মনিটরিং করা উচিত। প্রত্যেকটি ব্যাংকের ফরেন কারেন্সির দায় বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ক্রাইসিস সেশন এখনো টাচ করেনি। ক্রাইসিস সেশন টাচ করার আগেই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করতে হবে। এই জন্য শক্ত মনিটরিং দরকার।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমেদ শাহিন প্রমুখ।

বি.বা/ডেস্ক/ক্যানি

Categories: অর্থনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.