শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের জের ধরেই চীনা নাগরিক জিয়ানহু খুন

মৌ দাস: রাজধানীর বনানীতে আলোচিত চীনা নাগরিক জিয়ানহু গাউ (৪৮) হত্যার ঘটনায় রহস্যজট খুলতে পুলিশ তার আরেকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ম্যানেজারকে খুঁজছে। জিয়ানহু হত্যার চার ঘন্টা পর হত মঙ্গলবার রাত ১০ টায় ওই কান্ট্রি ম্যানেজার বাংলাদেশ ত্যাগ করে চীনে চলে গিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে জিয়ানহু গাউ হত্যার শিকার হন। পুলিশের ধারণা, চীনা নাগরিকের প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হতে পারে। ঘটনার পর চীনা নাগরিকের বান্ধবী লিউ সিসি-যিনি পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাকেও গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বান্ধবী লিউ সিসি বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৮২ নম্বর বাড়িটি মাসিক ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া করিয়ে দেন। লিউ সিসি জানিয়েছেন, পাথর সাপ্লাই ও বাড়ি নির্মানের সামগ্রী সরবরাহের কাছে জিয়ানহু’র সঙ্গে বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ এই তথ্যের সূত্র ধরে ধারণা করছে, চীনা নাগরিক জিয়ানহু তার ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের শিকার হতে পারেন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার জং সু হং নামে এক চীনা নাগরিক বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার বাদী উত্তরার সুমেক লিয়াজোঁ অফিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ম্যানেজার। এজাহারে তিনি বলেন, ‘আমরা গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গাওয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় তার কয়েক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই তার খোঁজ দিতে পারেননি। এরপর আমি উত্তরা থেকে বনানীতে তার ফ্ল্যাটে যাই। এ সময় সেখানকার কয়েকজন আমাকে বলেন, ভবনের উত্তর পাশে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ ও সিআইডিকে জানালে তারা ওই লাশ উদ্ধার করে জানতে পারেন তিনিই জিয়ানহু গাও।’ এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার দিনই সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ৩ নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিয়ান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন দেশী ও বিদেশী একাধিক পার্টনারকে খোঁজা হচ্ছে। যাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে তিনি খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তারা ধারণা করছেন। এরই মধ্যে নিহতের স্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশীয় লোকজনসহ চীনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুয়ায়ী ২০১৬ সাল থেকে জিয়ানহু গাও বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময়কালে তার সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থান করা অনেক চীনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার বিভিন্ন ব্যবসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চীনা ফ্যাব্রিক্স বাংলাদেশের বাজার বিক্রির অন্যতম ব্যবসায়ী ছিলেন জিয়ানহু। পদ্মা সেতু নির্মান কাজে পাথর সরবরাহ ছাড়াও তিনি পায়রা বন্দর নির্মাণে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজে জড়িত ছিলেন। এসব ব্যবসায় তিনি বাংলাদেশী ও চীনা নাগরিকদের যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালনা করতেন। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এসব কাজ করতে গিয়েই তার সঙ্গে একাধিক পার্টনারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ডিবির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করেছি। মামলা তদন্তভার আমাদের ওপর ন্যস্ত না হলেও হত্যা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই বাড়ির দীর্ঘ সময় ধরে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকার বিষয়টিও রহস্যজনক। তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হত্যার দিন রাতে পালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, তদন্তের অংশ হিসাবে নিহতের স্ত্রী, তার বান্ধবী ও চীনা পার্টনারদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখন পর্যন্ত দেশী ও বিদেশী একাধিক পার্টনারকে সন্দেহের তালিকায় রেখে হত্যা মামলার তদন্ত কাজ চলছে। সূত্র: ইত্তেফাক বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস/জামিউল আহসান সিপু

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.