বৃহস্পতিবার ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

১০ ডিসেম্বর : শরীয়তপুর ও মাদারীপুর মহকুমা মুক্ত দিবস

অনলাইন ডেস্ক: আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শরীয়তপুর মুক্ত দিবস। এদিন শরীয়তপুর হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এদিনে শরীয়তপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের প্রতিরোধের মুখে পতন হয় পাকবাহিনীর। শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত ছিল। ১০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে বীর বাঙালি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বাদী ও প্রসিকিউশন সাক্ষী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় শরীয়তপুর ছিল মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত। নড়িয়া, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, জাজিরা ও পালং থানা নিয়ে মাদারীপুর মহকুমা অঞ্চলকে বলা হতো পূর্ব-মাদারীপুর। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে এসব অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় আরেকটি মহকুমা। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হাজী শরীয়তুল্লাহর নামানুসারে নবগঠিত এই মহকুমার নামকরণ করা হয় শরীয়তপুর। পরে ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় রূপান্তর হয়। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় শরীয়তপুর ও মাদারীপুর মহকুমা মুক্ত হয়। এরপর শরীয়তপুর জেলায় হানাদার বাহিনীর কোনো উপস্থিতি বা কার্যক্রম ছিল না। তিনি বলেন, মাদারীপুর মহকুমার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদের জাতীয় সংসদ সদস্য ডা. আবুল কাশেম, আমিনুল ইসলাম দানেশ, আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতা ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তৎকালীন ক্যাপ্টেন কর্নেল (অব.) শওকত আলী একটি সভা করেন। সভায় কর্নেল শওকত আলী মাদারীপুর ও পূর্ব-মাদারীপুর (বর্তমান শরীয়তপুর) মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য শওকত আলীকে পরবর্তীতে বীর খেতাব দেয়া হয়। মাদারীপুর মহকুমাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মাদারীপুর ও পূর্ব-মাদারীপুরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসের ২২ ও ২৩ তারিখে সদর থানার আংগারিয়া মধ্যপাড়া, উত্তর-দক্ষিণ মধ্যপাড়া, ঝালোপাড়া, কাশাভোগে, নীলকান্দি, আংগারিয়া, ধানুকা, কোটাপাড়া ও বর্তমান জেলা প্রশাসকের বাড়ি এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর নেতৃত্বে রাজাকার, আলবদররা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। গণহত্যায় প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল। পাকিস্তানিরা ১৮১ জন নারী-পুরুষকে মাদারীপুর এআর হাওলাদারের জুট মিলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে নারীদেরকে ধর্ষণ করে, পরে হত্যা করে তাদের মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিফলক হিসেবে ২০১০ সালে মধ্যপাড়ায় বধ্যভূমিতে কোনো মতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। তাতে মাত্র ৮১ জন শহীদের নাম উঠে এসেছে, যারা এলাকার মানুষ ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য হিন্দু নারী-পুরুষ হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তাদের কোনো তালিকা নেই। এছাড়া হানাদার বাহিনীরা নড়িয়া থানার গোলার বাজার, তেলিপাড়া, ভূমখাড়া বিঝারি গ্রামের হিন্দু ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বজনদের সামনে অনেককেই গুলি করে হত্যা করা হয় এবং অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ করা হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভেদরগঞ্জ থানার মহিষারে দুই শতাধিক হানাদারের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন আক্কাছ মিয়া। মহিষারেই ওই ১১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে গণকবর দেয়া হয়। রাজাকারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পালং থানায় ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালায়। অপারেশনে আবু তাহের ও আব্দুল মান্নান শহীদ হন এবং অসংখ্য হানাদার ও তাদের সহযোগী রাজাকার মারা যায়। থানা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার ইদ্রিস আলী, আবুল কাসেম মৃধা ও মুক্তিযোদ্ধা আলী আজম সিকদারসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ। ১৮ জুলাই ডামুড্যা থানা দামুদর নদীতে একটি লঞ্চে করে পাক হানাদাররা এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা হামলা চালায়। এতে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পানিতে ডুবে মারা যায়। ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট থানায় যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান রাঢ়ী ও ইকবাল হোসেন বাচ্চু। জাজিরায় মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। নড়িয়া থানার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন, মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী মিতালী, মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। ২০১০ সালের মে মাসে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে শরীয়তপুরের আটজন রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার। ওই মামলায় ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর পালং থানার রাজাকার সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারের ফাঁসির আদেশ হয়। ফাঁসির আদেশের পর সোলায়মান মোল্লা কারাগারে মারা যান। ইদ্রিস আলী পলাতক রয়েছেন। বাকিরা আগেই মারা গেছেন। শরীয়তপুরে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের জঘন্যতম গণতহ্যা সংগঠিত হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার ছাড়া কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হয়নি। জেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ সব স্তরের মানুষের দাবি জেলা সদর চৌরঙ্গী মোড় এবং যুব উন্নয়নসংলগ্ন প্রেমতলা মোড়ে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস

Categories: জাতীয়,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.