শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

খসে পড়ছে ৪ কোটি টাকার সংস্কারকাজ, ভেঙে গেছে সিঁড়ি

অনলাইন ডেস্ক: বিশ্ব ইতিহাসের তালিকাভুক্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার। বৌদ্ধবিহারটি সংস্কারের মাধ্যমে পুরোনো আদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে বিহার প্রাঙ্গণ। বিহারের গায়ে লাগানো হয়েছে পুরোনো ইট আর চুন-সুরকির কংক্রিট এবং পোড়া মাটির ফলক। কিন্তু সংস্কারের তিন বছরের মাথায় পোড়া মাটির ফলক খসে পড়েছে। বিহার প্রাঙ্গণে প্রবেশের কাঠের ব্রিজ ও কেন্দ্রীয় মন্দিরে ওঠার একমাত্র কাঠের সিঁড়ি গত দুই মাস আগে ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় বিহারে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা কেন্দ্রীয় মন্দিরে উঠতে পারছে না। আবার বিহার প্রাঙ্গণে প্রবেশের কাঠের ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের সাবধানে পারাপার হতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে দুই ভাগে মোট ১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ করা হয়। এর মধ্যে কাঠামোগত উন্নয়নকাজ আট কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং মূল বৌদ্ধবিহারের সংস্কারে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কাজটি করেছেন ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস ডেইলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বৌদ্ধবিহার সংস্কারে চার কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মূল বিহারের গায়ে জন্মানো ঘাস তুলে ফেলে চুন-সুরকি দিয়ে নতুন করে গাঁথুনি, বন্ধ হয়ে যাওয়া কূপ পুনঃখনন ও কূপের চারদিকে রেলিং দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের তিন বছরের মাথায় নষ্ট হয়েছে পোড়া মাটির ফলক, কাঠের ব্রিজ ও কাঠের সিঁড়ি। মন্দিরের দেয়ালগুলোতে পুরোনো পোড়া মাটির ফলক লাগানো হয়েছিল। সেসব ফলকগুলো এখন বেশির ভাগই নেই। আর যেগুলো আছে সেগুলো ধীরে ধীরে খসে পড়ছে ও ভেঙে যাচ্ছে। দর্শনার্থীকে টিকিট কেটে প্রবেশের পর মন্দিরে যেতে হলে মন্দিরের পূর্ব দিক থেকে প্রথমে কাঠের ব্রিজ পার হতে হয়। কাঠের ব্রিজের পাটাতনের কয়েকটি কাঠ ভেঙে গেছে। এতে দর্শনার্থীদের সাবধানে ব্রিজটি পারাপার হতে হয়। কেন্দ্রীয় মন্দিরের উত্তর পাশে রয়েছে একমাত্র প্রধান কাঠের সিঁড়ি। মন্দিরের ওপরে উঠতে হলে সিঁড়ি বেড়ে উঠতে হয়। কিন্তু সিঁড়ির কিছু অংশ ভাঙা থাকায় গত দুই মাস আগে বাঁশের বেড়া দিয়ে সিঁড়ির মুখ বন্ধ রাখা হয়। সিঁড়ির এক পাশে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। যেখানে লিখা আছে, ‘কেন্দ্রীয় মন্দিরের প্রধান সিঁড়িপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উপরে ওঠা থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো’। সিঁড়ির খুঁটিতে উইপোকা ও ঘুণে ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সিঁড়ি ব্যবহৃত না হওয়ায় মন্দিরের ওপরে উঠতে পারছেন না। যারা মন্দিরের ওপরে উঠছেন তারা ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে সিঁড়ির দুই পাশ দিয়ে উঠছেন। আর যারা পারছেন না তারা নিচ থেকে মন্দিরের চার পাশে ঘুরেফিরে যাচ্ছেন। দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেন, সংস্কারের সময় নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে ব্রিজ ও সিঁড়ি ভেঙে গেছে। আরও মজবুত জিনিসপত্র দিয়ে সংস্কারকাজ করা দরকার ছিল। বগুড়ার থেকে আসা দর্শনার্থী বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, সরকারি চাকরি থেকে সদ্য অবসর নিয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে সোমপুর বিহারে বেড়াতে এসেছি। গত ৩০ বছর আগে এখানে একবার বেড়াতে এসেছিলাম। এখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কষ্ট করে মন্দিরের ওপরে উঠতে এবং নামতে হলো। প্রতিটি জিনিসের একটি সময়সীমা রয়েছে। যেহেতু সিঁড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সিঁড়িটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, মহাপরিচালককে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তার নির্দেশনায় সাইনবোর্ড লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা ওপরে ওঠা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু তারপরও সিঁড়ির পাশ দিয়ে দর্শনার্থীরা ওপরে ওঠেন। তিনি বলেন, চিঠির প্রেক্ষিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ১৫ দিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। সংস্কার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখানে তিন লাখ ৯৩ হাজার ২৮৬ জন দর্শনার্থীরা এসেছিলেন। বিষেরবাঁশি.কম/সংবাদদাতা/নিরাক

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.