শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেপরোয়া জেলেরা মা ইলিশ শিকার করছে

অনলাইন ডেস্ক: ঝালকাঠির রাজাপুর ও নলছিটি উপজেলা উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিষখালি নদীর জেলেরা প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। স্বল্প সংখ্যক জনবল ও স্থানীয় ভাড়াটিয়া কম গতির ট্রলার দিয়ে ঢিমেতালে চলছে মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষাভিযান।
গভীর রাতে ও দিনের বেলা নামমাত্র-লোকদেখানো অভিযান চালালেও প্রশাসনের অভিযান অনুসরন করে অসাদু জেলেরা দেদারছে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ নতীতীরবর্তী বাসিন্দাদের। সূত্রমতে, আশ্বিনের পূর্ণিমার আগের ৪ দিন ও পরের ১৮ দিনসহ মোট ২২দিন বিষখালি নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ লক্ষে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ নিধনে সরকার নিষেধজ্ঞা জারি করে। আইনানুযায়ী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাত, কেনাবেচা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
শনিবার সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সরেজমিনে বিষখালি নদী তীর ঘুরে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টা ও সোয়া ১২ টার দিকে গজালিয়া ও হদুয়া এলাকায় প্রায় ৩০টিরও বেশি নৌকায় কারেন্ট জাল দিয়ে মা ইলিশ শিকার করছে। এসময় নিয়ামতির ফাড়ির নৌ একটি টহল ট্রলার গজালিয়া এলাকায় গিয়ে নোঙর করে চলে যেতে দেখলেও অন্যকোন অভিযানের ট্রলার চোখে পড়েনি।
অভিযান শুরু থেকেই মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেলে এবং রাতে অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু অভিযান শুরু করে ট্রলার সেখান থেকে কিছুদূর চলে গেলেই জেলেরা নদীতে নৌকা নিয়ে নেমে কারেন্ট জাল ফেলে মাছ শিকার শুরু করে। সকালে ভোররাত থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত অভিযান চলে না, এ সময় জেলেরা মাছ শিকার করে এবং দুপুরে বিকেলে ও রাতে অভিযানের ট্রলার পাহারা দিয়ে চলে ইলিশ শিকার।
অভিযানের ট্রলারে দেখামাত্র পালিয়ে নদীর পাশের নালায় নৌকা ডুবিয়ে জেলেরা পালিয়ে যায়। পরে আবার প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে পুনরায় মাছ শিকার শুরু করে। পালট গ্রামের জেলেদের অভিযোগ, পালট ও বড়ইয়া গ্রামের জেলেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকলেও নলছিটির উপজেলার জেলেরা বিষখালির অপরপাড়ের বেরনবাড়িয়া, হদুয়া, নেয়ামতি, গজালিয়া চামটা গ্রামের জেলেরা প্রায় ৩০টিরও বেশি নৌকা দিয়ে কারেন্ট জাল ফেলে দেদারছে ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিন ইলিশ শিকারের জন্য ওইসব এলাকার মৌসুমি জেলেরা একাধিক কারেন্ট জাল ও নৌকা পূর্বেই মজুদ করে রেখেছে, যাতে প্রশাসনের হাতে জাল ও নৌকা ধরা পড়লেও পুনরায় আবার নদীতে মাছ শিকার করতে পারে। নলছিটি উপজেলা শহর থেকে সড়ক পথ বেহাল ও নদীপথের দূরত্ব বেশি হওয়ায় ওই উপজেলার প্রশাসন নদীর তীরে কোন অভিযান চালাচ্ছে না বলেও অভিযোগ পালট গ্রামের জেলেদের। সরকারি তালিকাভুক্ত জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানলেও মৌসুমি জেলেরা নদী থেকে ইলিশ ধরে গ্রামে গ্রামে গোপনে বিক্রি করে যাচ্ছে।
ফলে তালিকাভুক্ত জেলে পরিবারগুলোর দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অর্থের মাধ্যমে ম্যানেজ করে অভিযোগ পরিচালনায় যেসব কর্মচারিদের সাথে রাখা হয় তাদের অনেকেই মোবাইলের মাধ্যমে জেলেদের কাছে তথ্য জানিয়ে ম্যাসেজ, কল ও ফেসবুকে ছবি বা ম্যাসেজ দিয়ে গতিবিধি এবং অভিযান শুরু ও শেষের লোকেশন জানিয়ে দেয়। যাতে অভিযানকে ফাকি দিয়ে মাছ শিকার চালিয়ে যেতে পারে। জেলেরাও কৌশল ব্যবহার করে ওই ফাকে জাল ফেলে বিভিন্ন সংকেত ব্যবহার করে জালের স্থান চিহ্ণিত করে রাখে এবং প্রশাসের লোকজন চলে গেলে দ্রুত জাল তুলে তীরে নিয়ে যায়। এসব পুরাতন কর্মচারিরা নতুনে যোগদান ও অপরিচিত এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থান না চেনায় এসব কর্মচারিদের দেখানো ও চিনানো এলাকায়ই অভিযান পরিচালিত করায়।
উপজেলার মানকি, সুন্দর, নাপিতেরহাট ও বাদুরতলা এলাকার জেলেদের কাছ থেকে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মচারিকে প্রায় ৬০ জনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে তুলে এজন্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে অবরোধকে লক্ষ করে জেলে পেশা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত জেলেরা বর্তমানে এলাকায় এসে অবস্থান নিয়েছে, সুযোগ পেলেই নদীতে নৌকা ও কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ শিকার শুরু করে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা শহর থেকে বিষখালি নদীর দূরত্ব অনেক অভিযান শেষ ও শুরুর মধ্যের সময়ে মাছ শিকার করছে, জনবল কম, নিজস্ব বাহন না থাকা এবং নদীতে দ্রুত গতির বাহন ব্যবহার করার সুযোগ না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির জেলেরা মাছ শিকার করছে।
বড়ইয়া ইউপি সদস্য শাহাদাৎ হোসেন কাজল মোল্লা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় যাতে এলাকার কোন মাছ ধরতে শিকার না করে এজন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু নলছিটির জেলেরা সুযোগ বুঝেঠিকই মাছ শিকার করছে, এবিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজর দেয়া জরুরি। নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রমনি কান্ত মিন্ত্রী জানায়, দূরত্ব ও দূর্গম হওয়ায় ওইসব এলাকায় অভিযানে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে, এ সুযোগে কিছু মাছ করছে, তবে অভিযান চলমান রয়েছে। জেলে ও জাল আটক করাও হচ্ছে। রাজাপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাসার শনিবার ১১টা ৫০ মিনিটে জানান, অভিযানের একটি টিম পালটে নোঙক করা করেছে এবং ইউএনওর নেতৃত্বে একটি টিম নদীতে রয়েছে। তিনি জানান, নদীর তীরে ছোট ছোট ক্যানেল থাকার কারনে অভিযান দেখে ক্যানেলে ডুকে পড়ে। আর ক্যানেলে ডোকা যায় না, ক্যানেলে অভিযান চালাতে গেলে জেলে ও তাদের লোকজন দাও পড়ে এবং ইট পাটকেল মারে। তার পরেও অভিযান চলমান রয়েছে। রাজাপুরের ইউএনও সোহাগ হাওলাদার জানান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ নিধনরোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। ইলিশ রক্ষায় নদীতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.