ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৭ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক: গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিঠু (২৫) নামে এক যুবককে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই দুই কর্মকর্তা ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন ও সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোমেন আলম।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী দিলারার অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা এলাকা থেকে প্রথমে র্যাব, পরে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পরিচয়ে মিঠুকে তুলে নিয়ে আসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কামাল হোসেন ও এএসআই মোমেন আলম। পরে মিঠুর স্ত্রী দিলারার কাছে ৭ লাখ দাবি করেন তারা। অন্যথায় তার স্বামীকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। দিলারা তাদের নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের এনায়েতনগর তাঁতখানা বাজারের সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে জাফর আলীর ছেলে মিঠুকে ৫২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এএসআই মোমেন আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ গ্রেফতার করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। ধৃত মিঠুকে একই দিন মাদক মামলা দায়ের পূর্বক সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মো. কামাল হোসেন আদালতে প্রেরণ করেন বলে থানা সূত্রে জানা যায়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী মিঠু মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার তেতৈইতলা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্ধা জাফর আলীর ছেলে। সে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকার সাত্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। এ ব্যাপারে মিঠুর স্ত্রী দিলারা জানান, আমার স্বামী মিঠুকে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার তেতৈইতলা এলাকা থেকে কালো রংয়ের হাইছ গাড়ীতে র্যাব পরিচয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমার স্বামী মিঠু মোবাইল ফোনে আমাকে ফোন করে ৭ লাখ টাকা আনতে বলে। আমি কারণ জানতে চাইলে প্রথমে র্যাব পরিচয়ে পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কামাল হোসেন টাকা না দিলে আমার স্বামীকে ক্রস ফায়ার দিবে বলে ভয় দেখায়।
পরে আমি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা জোগার করে আমার স্বামী মিঠুর নাম্বারে ফোন দেই। ফোনে আমাকে টাকার জোগার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমি টাকা কোথায় আসবো জানতে চাই। তারা আমাকে চিটাগাং রোড আসতে বলে। আমি চিটাগাং রোড আসলে তারা আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দিকে আসতে বলে। আমি থানার সামনে গেলে কালো রঙয়ের হাইয়েস গাড়িটি গতি রোধ করে আমাকে গাড়িতে উঠায়। গাড়িতে থাকা এসআই মো. কামাল হোসেন ও এএসআই মোমেন আলম টাকা আনছি কিনা জানতে চায়। এ সময় আমি আমার স্বামীকে দেখতে চাইলে তারা আমাকে পিছনে ফিরতে বলে। পিছনে ফিরে দেখি হাইয়েস গাড়ির কোনায় চোখ বাধা অবস্থায় আমাব স্বামী মিঠু বসে আছে। এ সময় গাড়িতে থাকা লোকজন আমার কাছে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাগের ভিতরে থাকা ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় এবং বলে, মিঠুকে ক্রস ফায়ার থেকে বাঁচাতে হলে ভোর ৫টার মধ্যে আরো ৩ লাখ টাকা নিয়ে আসবি। এই বলে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। আমি সকালে নারাণগঞ্জ ডিবি অফিসে গেলে আমার স্বামীকে দেখতে না পেয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছে ভেবে আতৎকে উঠি।
পরে ডিবি পুলিশের এসআই আব্দুল জলিল আমাকে সান্তনা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে আসলে আমি গাড়িটি চিনতে পারি। এ সময় আমার কাছে বাকি টাকা দাবি করে, আমি টাকা নিয়ে লোক আসতেছে বললে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে আমার স্বামীকে থানা হাজতে নিয়ে যায়। আমার স্বামীকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতে পাঠায়।
এদিকে মামলায় উল্লেখিত আসামির বর্তমান ঠিকানার বাড়ির মালিক সাত্তার মিয়ার স্ত্রী জানান, মিঠু নামে কোন ভাড়াটিয়া আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে না।
অভিযোগের বিষয়ে এসআই কামাল হোসেন বলেন, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার কোন গাড়ি নাই। আসামি কোথা থেকে করেছেন জানতে চাইলে এসআই কামাল তিনি প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দেন এবং বলেন, থানায় আসেন। চা খেতে খেতে তথ্য দেই।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক বলেন, মাদক ব্যবসায়ী আটক করা হলে তাদের পরিবার নিজেদের নির্দোষ দাবি করেই। মিঠুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ক্রসফায়ারের ভয় ও টাকা আদায়ের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন ওসি।
বিষেরবাঁশি.কম/সংবাদদাতা/ নাদিম
Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,নারায়ণগঞ্জের খবর,সারাদেশ