একটি দুর্ঘটনায় দু’টি পরিবার পথে বসেছে
অনলাইন ডেস্ক: প্রতিদিনের মত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে ইজিবাইক চালানোর কাজে বের হয়েছিল জামাল ও মাসুদ দুই ভায়রা। এ সময় গোগনগর বাজারে ইজিবাইকে মালামাল তোলার সময় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির একটি কাভার্ডভ্যান তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে রাস্তায় জামালের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদের মৃত্যু হয়।
সদর উপজেলার গোগনগর এলাকায় ভাসানী সরদার (৮০)। বার্ধক্য তার কর্মক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে অনেক আগেই। গত কয়েকমাস যাবৎ শয্যাশয়ী। চিকিৎসা আর ওষুধ খরচে নুইয়ে পড়েছেন তিনি। ভাসানী সরদারের স্ত্রী রহিমা বেগম। বার্ধক্য আকড়ে ধরেছে তাকেও। কিছুদিন পরপরই আক্রান্ত হন নানা রোগে। জীবনের এই শেষ সময়ে তাদের একমাত্র ভরসা তাদের ছোট ছেলে জামাল হোসেন। তারও রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। ইজিবাইক চালক জামালের স্বল্প আয়ের মধ্যেই কোনো রকম চলছিল ছয় সদস্যের তাদের এই সংসার।
জামাল হোসেনের স্ত্রীর বোন লিজা আক্তার ও তার স্বামী মো. মাসুদ। মাসুদ ঢাকা কামরাঙ্গি চর এলাকায় থাকেন। তিনি বেশ কিছু মাস যাবৎ বেকার ছিলেন। যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেটাও চলে গেছে। তাই জীবিকার তাগিদে চলতি মাসের শুরুর দিকে পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ভায়রার কাছে চলে আসেন। ঠিক করলেন ভায়রা জামালের থেকে ইজিবাইক চালানো শিখে এখানেই ইজিবাইক চালাবেন। সে অনুযায়ী ঢাকার সব কিছু ছেড়ে চলে আসেন তারা। ভায়রার বাড়ির পাশেই একটি ছোট্ট রুম ভাড়াও নিয়ে নেন। কিছুদিন পর বড় ছেলেকে পাশের একটি স্কুলে ভর্তি করার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন এই দম্পতি।
দুই পরিবারেই সবকিছু ঠিক ছিল। সবাই চোখে হাজারো স্বপ্ন সাজিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। এই বুঝি জীবনের চাকা ঘুরলো। ঠিক এমন সময় তাদের সকল আশা, স্বপ্ন চুরমার করে দিলো বেপরোয়া একটি ট্রাক।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা দুই পরিবার। দুই পরিবারেই এখন শোকের মাতম। কান্না ও আহাজারির শব্দে ভারি হয়ে আছে পুরো এলাকা। এলাকায় এমন একটি ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় নিহত জামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানেই জামালের লাশ। শেষ বারের জন্য জামালকে দেখার জন্য ভীড় করছেন আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীরা। পাশে ঘরে কান্নায়, আহাজারীতে ভেঙ্গে পরেছেন জামালের স্ত্রী রুমি আক্তার ও মা। বিছানার একপাশে পরে আছেন বাবা ভাসানী সরদার। শয্যাশয়ী বাবার শারীরক অবস্থা এমন যে, সন্তানের মৃত্যুতে এক ফোটা অশ্রুও জড়াতে পারছেন না।
নিহত জামালের সাত বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস জানেন না তার বাবার কি হয়েছে। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলে, বাবা বাড়ির উঠানে ঘুমিয়ে আছে। সে জানানে প্রতিদিন টিফিনে জন্য তার বাবা আর টাকা দেবে না। সে জানেনা আর কোনোদিন তার বাবা তাকে ইজিবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবে না। দশ বছর বয়সী ছেলে রিয়াদেরও এই বোধ নেই। বাড়িতে অনেক মানুষের ভীড় দেখে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে।
নিহত মাসুদের বাড়িতে তখনও তার মৃত্যুর সংবাদ পৌছায়নি। তার স্ত্রী লিজা জানেনা তার স্বামী মারা গেছে। ছোট ছোট দুই ছেলেকে আকরে ধরে বারবার আল্লার দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছে। তার চোখে মুখে তখনও চিন্তা ও স্বামী হারানোর আশঙ্কা।
পরিবারের উপার্জনকারী ব্যাক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা দুই পরিবার। কোথায় পাবে মাসে শেষে বাড়ি ভাড়া, কিভাবে চলবে তাদের সংসার। ছোটছোট চারশিশুর পড়াশোনা ও ভবিষ্যতই বা কি হবে! কে দিবে জামালের বৃদ্ধ বাবা-মার চিকিৎসার খরচ। এমন হাজারো প্রশ্ন আশঙ্কা দুই পরিবার ও তাদের স্বজনদের মনে।
বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.
Categories: নারায়ণগঞ্জের খবর