মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

১৯ বছর পর জিয়া হলের নাম পরির্বতন করতে চায় সেলিম ওসমান

বিষেরবাঁশি.কম: নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া শহীদ জিয়া হল। একসময় সংস্কৃতিকর্মী, নাট্যশিল্পীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান হতো। প্রদর্শিত হতো সিনেমা, নাটক, নাটিকা, নৃত্যানুষ্ঠান, আবৃতি। চাষাড়া মোড় অতিক্রম করা পথচারীরা মাইকের শব্দ পেয়ে ঢুকে পড়তো হলের ভেতর। খানিকটা বিনোদন উপভোগ করে আবার চলে যেত তার গন্তব্যে। বাধা-ধরা কোন নিয়ম ছিল না। দু-একটি নির্দিষ্ঠ অনুষ্ঠান ছাড়া উম্মক্ত থাকতো সবার জন্য। কিন্তু সেই হল এখন পরিনত হয়েছে ভূতড়ে বাড়িতে। রাজনৈতিক পালাবদল ও হিংসাপরায়ণ মনোভাবের কারণে হলটি সংস্কারের জন্য নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। যার ফলে হলটি এখন পরিত্যক্ত। তবে হলটির আউটডোরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা সংগঠনের নামে বাণিজ্যিক মেলার কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। বর্তমানেরও চলছে। সন্ধ্যায় বাইরে আলোর ঝঁলকানিতে বুঝার উপায় নেই অন্ধকারে ভুতের বাড়ি হয়ে আছে হলটি।

সূত্রমতে, নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া রাইফেল ক্লাবের পূর্বপার্শ্বে একটি পুকুর ভরাট করে ৫৯ শতাংশ জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিনোদন পিপাষু মানুষদের জন্য একটি হল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টাউন হল নামে হলটির ভিত্তি প্রস্তর করেন। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এম এ সাত্তার হলটি উদ্বোধনের সময় শহীদ জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে টাউন হলের পরিবর্তে হলটির নাম দেন জিয়া হল। ১৯৯৬ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হলটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন করা হয়। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার হলটির নাম পরিবর্তন করে জিয়া হল রাখা হয় এবং হলের সম্মুখভাগে শহীদ জিয়ার মুরল স্থাপন করা হয়।

জিয়া হলের নাম পরিবর্তনের কথা স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি অংশ দাবি করে আসছিলো। কখনও কখনও জিয়া হলে নির্মিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুর‌্যালে কালি ল্যাপন করা হয়েছিল। কখনওবা সাদা কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। তবে, এবার সেই জিয়া হলের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব জানিয়ে যা যা করণীয় তা করার তাগিদ দিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বর্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সেলিম ওসমান এ কথা জানান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের উদ্যোগে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ওই আলোচনা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন,  আমাদের যারা ক্ষতি করেছিল, সেখানে দেখা যায় একজনের ফটো লাগিয়ে একটা হল হয়ে পরে রয়েছে। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে আনুরোধ রাখতে চাই, হল দিতে না পারেন, বিল্ডিং দিতে না পারেন, আমাকে মাঠ দেন। আমার বাচ্চারা যেন খেলাধুলা করতে পারে। আমরা যেন অনুষ্ঠান করতে পারি। আমরা মেলা করে দেখবেন এই বিল্ডিংয়ের টাকা উঠিয়ে দেব।
জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, চলেন আমার সাথে কোন মন্ত্রণালয় যেতে হবে। আমরা আর এ নাম দেখতে চাইনা। আমরা এই ফটোটা দেখতে চাইনা। আমরা এ নামটাকে পরিবর্তন করতে চাই। আমরা এটাকে একবার নাম দিয়েছিলাম টাউন হল, একবার নাম দিয়েছিলাম মুক্তিযোদ্ধা হল। যে নামই হোক। নাম না হলে দরকার নাই, টাউন হলই হবে। আমদের দায়িত্ব হবে এইটাকে ঠিক করে নেওয়া।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মো.জসিম উদ্দিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, বিকেএমইএ এর প্রথম সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়াদার খান কাজল প্রমুখ।

বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.

Categories: নারায়ণগঞ্জের খবর

Leave A Reply

Your email address will not be published.