শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

লালবাগে প্লাষ্টিক কারখানায় আগুন, প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে: তদন্ত কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে

অনলাইন ডেস্ক: বুধবার (১৪ আগষ্ট) লালবাগের ইসলামবাগের যে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগেছিল তাতে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। ফলে মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতাও ছিল অনেক বেশি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। পোস্তা ওয়াসা পাম্পের বিপরীত পাশের সরু পথ দিয়ে ভেতরে এই কারখানার অবস্থান। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ কমিটি গঠন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কুমার ঘোষকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল হালিম এবং উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) নিউটন দাসকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ইটের গাঁথুনির দোতালা ভবন, ওপরে টিন। পাশাপাশি অন্তত অর্ধশত প্লাস্টিক, পলিথিন ও কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের কারখানা। অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই কারখানার আশেপাশে মানুষ ছিলেন। কিন্তু প্লাস্টিক কারখানার দাহ্য পদার্থের আগুনের তীব্রতার কারণে কেউ আগুন নেভানোর সাহস করেনি। তারা দ্রুত নিরাপদে চলে গেছেন। এসব কারখানায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও একেবারেই নেই। টিপু হাজীর বাড়ি নামে পরিচিত এই বাড়িটির নিচতলায় প্লাস্টিক কারখানা এবং ওপরে গুদাম। ভবনটির গা-ঘেঁষে তিনটি বড়বড় ট্রান্সফরমার। এসব ট্রান্সফরমার দিয়েই এই কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণণা অনুযায়ী, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে ভবনটির পেছনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। এরপর পাশের কারখানার একজন কেয়ারটেকার বিষয়টি তার মালিককে জানান। তার মালিক বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানান। তারা এসে সংযোগটি ঠিক করে দিয়ে যাওয়ার দুইঘণ্টা পরই আগুন লাগে। রাত পৌনে ১১ টার দিকে ইসলামবাগের পোস্তার ঢালের টিপু হাজীর বাড়িতে আগুন লাগে। বাড়িটিতে মামুন নামে এক ব্যক্তি প্লাস্টিক তৈরির কারখানা দিয়েছেন। গত দশ বছর ধরে তিনিই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে আছেন বলে স্থানীয়রা জানান। আড়াইঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ঈদের ছুটি থাকায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে একজন কারিগরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছে কারখানাটির পাশ্ববর্তী অপর কারখানার কেয়ারটেকার চিত্তরঞ্জন দাস। চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে এখানে চাকরি করি। আগুনের তাপ বেশি থাকায় আমরা পানি দেওয়ার সাহস করিনি। প্লাস্টিক থাকায় অনেক কিছু পুড়েছে। আবার শব্দও হয়েছে, তাই ভয়ে কেউ কাছে যায়নি।’ আশরাফ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘কারখানার একজন কারিগরকে অগ্নিকাণ্ডের পরপরই অচেতন অবস্থায় বের করা হয়।’ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এখানে আসি। আসার পর আমাদের রিজার্ভ পানির পাশাপাশি কাছাকাছি পানির উৎস খুঁজতে থাকি। এই এলাকা নিয়ে আমাদের ভালো করে স্টাডি থাকায় পানির উৎস কোথায় তা জানা ছিল। তাই দ্রুত পানি পেয়ে যাই। তবে জায়গাটি গিঞ্জি হওয়াতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত গাড়ি নেওয়া যায়নি। পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি দিতে হয়েছে। এতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে, তবে আমরা কাজটি সঠিকভাবে করতে পেরেছি। এতে ক্ষয়ক্ষতি কমেছে।’ ঘটনার পর কারখানার মালিকরা ঘটনাস্থলে যাননি। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখা গেছে। তবে তারা কোনও কথা বলতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে লালবাগের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ৭৮ জনের প্রাণহানি হয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্যও প্লাস্টিকের গুদামকে দায়ী করা হয়। এরপর পুরান ঢাকায় প্লাস্টিক কারখানার বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন এই কারাখানাটিরও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তবে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে আবারও সব প্লাস্টিক ও পলিথিন কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.