মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

এরশাদের প্রধানমন্ত্রী মিজান চৌধুরীর গাড়ীতে জুতা মেরে আমি এখন ইউরোপে:আহমেদ ফিরোজের স্মৃতিচারণ

অনলাইন ডেস্ক (সুভাষ সাহা): ইউরোপের মাটিতে আজ ১২ আগষ্ট আমার ৩০ বছর পূর্তি। ৩০ বছর আগে আমার ইউরোপে আসার পেছনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ‘অবদান’ উল্লেখযোগ্য। তিনি স্বৈরাচার না হলে আমার ইউরোপে আসা হতো না! স্বৈরাচার আমাকে প্রবাসী বানিয়েছে। সারা বাংলাদেশ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তখন উত্তাল। সেসময় আমি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এবং নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমি তখন মরণপন সক্রিয়। নুর হোসেনের মৃত্যূ খুব কাছে থেকে দেখেছি। চোখের পর্দায় এখনো ভাসে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ,কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তগুলো এখনো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। আমি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাই মঞ্চ পাহাড়া দিয়েছি। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোস্তফা মোহসীন মন্টু ভাইয়ের নির্দেশ মেনে রাস্তায় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। স্বৈরাচার এরশাদের প্রধান মন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে জুতা ফিকে মেরেছিলাম! ঘটনাস্থলে বন্ধু শফি মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর নিরাপত্তা অফিসার ছিল বিধায় সে যাত্রায় বেঁচে যাই। নারায়ণগঞ্জের বাসায় থাকতে না পেরে ধানমন্ডি খালাতো বোনের বাসায় পালিয়ে ছিলাম। কলকাতায় গিয়ে আওরঙ্গ ভাইয়ের সাথে ছিলাম কয়েকদিন ! আওরঙ্গ ভাইয়ের আথিয়েতা ভুলার ভুলবার নয়। আওরঙ্গ ভাই প্রচুর সময় দিয়েছেন। সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখা,হোটেলে দই বড়া খাওয়ার সময়গুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ট সময়। বর্ধমানে গিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাসায় কাটিয়েছি একরাত। কাদের ভাই আমাকে সারা রাত ঘুমাতে দেননি l রাত জেগে আমরা দেশের কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছি। কাদের ভাইয়ের জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এর লেখা একটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম,সেই বইটাই ছিল সে রাতে আমাদের আলোচনার বিষয়। ফ্লোরে বসে রাতের খাবার খেয়েছি ! বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে কাটানো সেই রাতটি ছিল আমার জীবনের আরেকটি শ্রেষ্ঠ রাত ! নারায়নগঞ্জ আমার বাসার অবস্থা তখন গরম। আব্বা আম্মা,ভাই বোন,আমার স্ত্রী সবাই আমার জন্য উৎকন্ঠায় দিন কাটাতো। পারিবারিক সিদ্ধান্ত হলো,আমাকে দেশ ত্যাগ করতে হবে। মতিঝিল থানায় তখন আমার ছোট ভাই কর্মকর্তা । মতিঝিল থানার ভিতরে তার সরকারি বাসায় আশ্রয় নিলাম। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে চোখের জলে বিদায় মতিঝিল থানায় কর্মরত ভাই আমার বাইরে যাবার টিকেট কনফার্ম করে নিয়ে এসেছে l থানায় ভাইয়ের থাকার রুমে আশ্রয় নিলাম আব্বা আম্মা ভাই বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। সদ্য বিবাহিতা আমার স্ত্রী ভেজা চোখে মতিঝিল থানা থেকে আমাকে বিদায় দিলো। রাত ১২টায় ফ্লাইট। ছোট ভাই থানার জীপে করে আমাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেয়। ইমিগ্রেশনে পুলিশ অফিসার আমাকে আটকে দিলো। ভাগ্যক্রমে অফিসারটি আমার ছোট ভাইটির পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সে যাত্রায় রক্ষা হয়। বিদায় নিয়ে বিমানের দিকে রওয়ানা দিলাম। এক কাপড়ে যাত্রা,আপাতত ব্যাংকক।ব্যাংকক ছিলাম এক সপ্তাহ,সেখান থেকে হংকং। হংকং ছিলাম দুই সপ্তাহ। সেখান থেকে বেজিং,বেজিং ছিলাম এক মাস। বেজিং থেকে মস্কো চলে এলাম। মস্কো তে রইলাম এক সপ্তাহ। সেখান থেকে হাঙ্গেরীতে রইলাম একমাস। এবার চলে এলাম অষ্ট্রিয়া,দিনটি ছিলো ১৯৯০ সালের ১২ আগষ্ট। অষ্ট্রিয়া সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলাম। কাগজ পত্র,পেপার কাটিং,রাজনৈতিক ছবি সত্য প্রমানিত হওয়ায় অল্প সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে গেলাম । আমার স্ত্রীকে আনার অনুমতিও পেয়ে গেলাম। ১৯৯২ তে ফেব্রুয়ারীতে আমার স্ত্রীকে অষ্ট্রিয়ায় নিয়ে এলাম। পার করে দিলাম ২৯ টি বছর। দীর্ঘ পথ চলায় অনেক কিছু অর্জন করেছি। ভালো মন্দ অনেক অভিজ্ঞতা। ইউরোপের প্রতিটি দেশ এখন আমার নখদর্পণ। ইউরোপীয়ান নাগরিকত্ব,লাল পাসপোর্ট সবই। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে মিস করি আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে। দীর্ঘ ২৯ বছরে এখনো মনেপ্রাণে ইউরোপিয়ান হতে পারিনি। রয়ে গেলাম বাঙালিই। একজন খাঁটি বাঙ্গালী। আমার হৃদয়ে এখনো বাংলাদেশ।আমার দল আমার প্রিয় আওয়ামী লীগ। আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ,জয়তু আওয়ামী লীগ,জয়তু আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.

Categories: খোলা বাতায়ন,জাতীয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.