মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

নারী এবং কন্যা শিশুরা আজ অপরাধীদের আক্রমনের বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক: ওয়ারীতে ৭ বছরের শিশু সায়েমাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়। নারী এবং কন্যা শিশুরা আজ অপরাধীদের আক্রমনের বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে এমন মন্তব্য করেছে নারী সংহতির সমাবের বক্তারা, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঐক্য ছাড়া কোন পথ খোলা নাই। নারী-শিশুর জন্য, সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং মর্যাদা সম্পন্ন সমাজ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।বিচারহীনতা,ধর্ষণ-যৌন-নিপ্রীড়নের বিরুদ্ধে পাড়ায়-মহল্লায়-প্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানায় নারী সংহতি। শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সংহতি সমাবেশ করেছে নারী সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। সমাবেশে সভাপ্রতিত্ব করেন নারী সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্পাদক পপি রাণী সরকার। তিনি বলেন, ঢাকার ওয়ারীতে ধর্ষণের পর নৃশংষ ভাবে খুন করা হয়েছে ৭ বছরের শিশু সায়মাকে। মোহাম্মদপুর কলেজের শিক্ষক ধর্ষণ করেছে কলেজের এক নারী শিক্ষার্থীকে। নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলে শিক্ষক ২০ জনকে ধর্ষণ করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষক ১২ জনকে এরপর নেত্রকোনায় শিশু-নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক নারী-শিশুর ওপর নৃশংস নিপীড়ণ-ধর্ষণ-যৌননিপীড়ন চলছেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আমরা কেউ জানি না এরপর কে? কোথায় ধর্ষিত বা খুন হবো? আমরা কেউ আজ নিরাপদ নই। না ঘরে,না বাইরে না বাসে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সকল স্থানে নারী এবং কন্য শিশুরা আজ অপরাধীদের আক্রমনের বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশে নিরাপত্তাহীনতা এমন অবস্থায় গেছে হয়তো কাল খবরের কাগজে আমি বা আপনিও ধর্ষণের শিকার হয়ে আরেকটা খবর হব, আরেকটা ধর্ষণ-মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। একটা দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার বলে কিছু না থাকলে ধর্ষণের মতো অপরাধ আশংকাজনক হালেও বাড়ে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তারই প্রমাণ। আমরা এমন রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে নাগরিক হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার নাই, সম্পত্তিতে সমানাধিকার নাই, অভিভাবকত্বে সমানাধিকার নাই, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নাই। ঘরে থেকেও শিশু-নারীরা আজ নিরাপদ নয়। একদিনের ব্যবধানে সায়মার ধর্ষককে গ্রেফতারও করা হলো। কিন্তু যে সংস্কৃতি ধর্ষক-নিপীড়ক তৈরি করে সে সংস্কৃতি ধর্ষনের মানসিকতা বদলের জন্য রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। একটি ছেলেশিশু শৈশব থেকেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে, মিডিয়ায়, চলচ্চিত্রে এবং সংস্কৃতিতে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে চিনতে শেখে, দেখে তখন বড় হয়ে সে ধর্ষক হয়ে ওঠে।

তিনি আরো বলেন, সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। খবরের কাগজে একের পর এক ধর্ষণের খবর আসছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। যারা এর বাইরে তারাও ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। একজন রং মিস্ত্রী, বাসের চালক, শিক্ষক ধর্ষণ করছে। যারা নিপীড়ন-ধর্ষণ করে, তারা মনে করে দেশে কোনো বিচার নাই। তার কোনো শাস্তি হবে না। সমাজ নারীদের পুরুষের সামনে ভোগ্যপণ্য হিসেবে হাজির করেছে। এ কারণে একজন নিপীড়ক পুরুষ মনে করে সে যা খুশি তা ই করতে পারে। পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার বলেই পুরুষ ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ইকরামুন্নেসা চম্পা বলেন, দেশের মানুষ এমন অবস্থায় এসেছে, কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, সত্য কথা বললে, মানুষকে সাহায্য করতে গেলে শাস্তি পেতে হয়। মৃত্যু, এমনকি দেশও ছাড়তে হতে পারে। এমতাবস্থায়, আমাদের সুবর্ণচরের সেই সাহসী নারী, ফেনীর নুসরাত থেকে সাহস নিতে হবে, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে। দেশের এই অনিরাপদ অবস্থাকে প্রশ্ন করতে হবে এবং এ থেকে মুক্তি পেতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া এই দুঃশাসন থেকে বের হওয়ার আর কোনো পথ নেই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী সংহতির জেলার অর্থ সম্পাদক রিয়া আক্তার। নারী সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য খাদিজা আক্তার অন্তরা। সংহতি বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন,গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি জেলার আহ্বায়ক অঞ্জন দাস, ধর্ষণ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক ও ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শুভ দেব।

বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস.

Categories: জাতীয়,নারায়ণগঞ্জের খবর

Leave A Reply

Your email address will not be published.