মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

উবারচালক

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: বাসা থেকে অফিসে আসার জন্য উবারে রিকোয়েস্ট পাঠাই। যে রিকোয়েস্ট রিসিভ করে সে গাবতলী ছিল। আমি ভাবছি গাবতলী থেকে আদাবর নিশ্চয় আসবে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো। উবারচালক ফোন করে বললো- ভাই, আমি আসতেছি। আমি বাসার নিচেই দাঁড়িয়েছিলাম। সে এসে হাঁপাতে থাকলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, ভাই অনেক দূর থেকে আসছি, বিশ টাকা বাড়ায় দিয়েন। আমি বললাম, সাধারণত এতো দূর থেকে কেউ আসে না। আচ্ছা বাড়িয়ে দেব। কারওয়ান বাজার চেনেন তো?

সে বললো- ভাই, ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায়। আমি সব রাস্তা চিনি। আমি বললাম- ভাই আমি মায়ের পেট থেকে ঢাকায়- আমি তো সব রাস্তা চিনি না। সে বললো- ভাই, আপনি তো আর বাইক চালান না, তাই চেনেন না।

এরকম এলোমেলো কথা বলতে বলতে বাইক ইকবাল রোডের সিগন্যালে এসে থামতেই হঠাৎ উবারচালক ব্যালেন্স হারিয়ে রাস্তায় পড়ে গেল। আমি রাস্তার ডিভাইডারে একটা লোহার পিলার ধরে রাস্তায় পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচালাম। আমি আর একজন অপরিচিত লোক সহোযোগিতা করলাম উবারচালকে বাইক নিয়ে উঠে দাঁড়াতে।

আমি তাকে বললাম- ভাই, আপনি একটু বসেন, একটু রেস্ট নেন, একটু স্থির হন। সে বললো- ভাই, ব্যাপার না। আমার কিছুই হয়নি, আপনি বাইকে উঠে বসেন।

আমি বললাম- ভাই, আপনি অস্থির হবেন না, একটু সাবধানে চালান।

খামারবাড়ির কাছাকাছি আসতে উবারচালক আরেক বাইকচালকের মিররে ডান হাতে সজোরে বাড়ি খেল। মূহুর্তের অসাবধানতায় উবারচালকের ডান হাতে অত্যন্ত বাজে ক্ষত হলো। সে রাস্তার পাশে বাইক পার্ক করল। ফুটপাতে কিছু পুলিশ চেয়ারে বসে ছিল। আমি তাদের কাছ থেকে একটি আস্ত নিউজ পেপার এনে উবারচালকের ডান হাতে পেঁচিয়ে দিলাম। মূহুর্তে পুরো নিউজ পেপার ভিজে টপটপ করে রক্ত পড়তে থাকল।

একজন পুলিশ বললো- সামনে ফার্মেসি আছে, ওখানে যান। সেখানে গেলাম, ফার্মেসির লোকটা বললো, যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে- আপনারা আল-রাজী হাসপাতালে যান। আমরা সেখানে গেলাম। সেখানে ডিউটিতে ডাক্তার বললো- সেলাই দিতে, খরচপাতি আছে। উবারচালক অসহায়ের মতো বললো- কতো খরচ হবে, স্যার? আমি বললাম- সেলাই করেন, যা খরচ হয় আমি দেব। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন- উনি আপনার কি হয়? আমি বললাম- উনি আমার কেউ হন না, খরচ দেব, সমস্যা নাই।

ডাক্তার সাহেব চিৎকার করে এসিস্ট্যান্টকে ডাকলেন। আর আমাকে বললেন বাইরে বসেন। আমি বাইরে বসলাম, অফিসে ফোন করে বললাম- আসতে একটু দেরি হবে। কিছুক্ষণ পরে এসিস্ট্যান্ট আমাকে ভেতরে ডাকলেন। আমি ভেতরে গেলাম। এসিস্ট্যান্টও জিজ্ঞেস করলেন- উনি আপনার কি হয়? আমি বললাম- উনি আমার কেউ হন না। একটা বিল আমার হাতে দিয়ে এসিস্ট্যান্ট বললো- কাউন্টারে টাকা জমা দেন। আমি কাউন্টারে গেলাম- সেখানে বসা লোকটা জিজ্ঞেস করল- উনি আপনার কি হয়? আমি অবাক হলাম- সবাই এই একই প্রশ্ন কেন করছে! বিল দিয়ে উবারচালককে নিয়ে বাইরে আসলাম।

উবারচালক আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল- ভাই, আল্লাহ আপনার ভালো করুক, ভাই, আল্লাহ আপনার সব রোজা কবুল করুক! আমি বললাম- আমি রোজা রাখি না, আমি ভালো মানুষ না। সে বললো- আপনি কেন রোজা রাখেন না তা আমি জানি না। রোজা রাখাই একমাত্র ভালো কাজ না, আর আপনি কেমন তা আমার জানা হয়ে গেছে।

আমি তাড়াহুড়ো করে অফিসে এসে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম। উবারচালকের শেষ কথাটা আমার মনে গেঁথে থাকলো। উবারচালক আমাকে মানুষের পর্যায়ে নিয়ে আনলেন। ধন্যবাদ, হে উবারচালক!

ফেসবুক থেকে নেয়া

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: খোলা বাতায়ন

Leave A Reply

Your email address will not be published.