শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

এ মেয়াদেও ঘুরে দাঁড়ানো হলো না বিএনপির

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: বিএনপির কাউন্সিলের তিন বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক স্বপ্ন নেতাকর্মীদের দেখানো হলেও মেয়াদ শেষে আরো হতাশা গ্রাস করছে দলটিকে। বর্তমান অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানো আদতেই সম্ভব কি না তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জন্মের পর বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় থাকা দলটি এ-ই প্রথম টানা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকল।

ক্ষমতায় থাকা অভ্যস্ত দলটি বাইরে থেকে আদৌ রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে পারবে কিনা, তা নিয়েও বির্তক চলছে। অনেক নেতা নতুন কাউন্সিলের কথা বলছেন, কিন্তু তাতে সায় মিলছে না হাইকমান্ডের। তারা মাঠ গোছানো, তৃণমূলের অঙ্গ ও সহযোগী দলগুলোর কমিটি গঠনের দিকেই বেশি নজর দিতে চান।

অনেকের মতে, কাউন্সিলে ভালো কিছু প্রস্তাব আনলেও মাঠের পরিস্থিতি এবং সরকারের চরম বৈরিতায় তেমন গণতান্ত্রিক স্পেস পায়নি বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসে দলের নেতাদের নানা পরিকল্পনায় সায় দেয়নি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বর্তমান নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কর্মীদের চাঙ্গা করতে পারছেন না। দলীয় একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়ায় দলটি কার্যত এলোমেলো হয়ে যায়। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্ন নিয়েই বছর পার করতে হয়েছে। খালেদাপন্থি বলে পরিচিতরা সেখানে সক্রিয় হননি। অনেক নেতা অভিমান করে নির্বাচনে অংশ নেননি।

এদিকে কাউন্সিলের মেয়াদ পূর্ণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব। কাউন্সিলে দলকে শক্তিশালী করতে এক নেতার এক পদের বিধান রেখে খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলের সদস্য ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, মাসিক চাঁদা ছয় মাস না দিলে পদ স্থগিত, এক বছর না দিলে পদ বাতিল, টানা দুই বছর চাঁদা না দিলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত, তিন বছর না দিলে প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় কাউন্সিলে। এছাড়া স্বল্পসময়ের মধ্যে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নেওয়া হয় নানামুখী পদক্ষেপ। অঙ্গ দলগুলোকেও পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে খোঁজ নিযে জানা গেছে, কাউন্সিলের পরে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। শুরুতে স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল, পরে তিন সদস্যের মৃত্যুতে মোট পাঁচটি পদ শূন্য হয়। ছাত্র ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও যুববিষয়ক সম্পাদক পূর্ণ মেয়াদে ঠিক করতে পারেনি। এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকর করতে পারেনি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৬১ নেতা একাধিক পদ ধরে রেখেছিলেন। ৩০ নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দিলেও বাকি পদের অনেকেই এ বিধান মানেননি।

কাউন্সিলে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। এক একটি কমিটিতে ১২ সদস্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এসব কমিটি গঠন হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে দেশের সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও এক নেতা একাধিক পদে থাকার আগ্রহের কারণে কমিটি গঠনে সমস্যা হয়েছে। এছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আংশিক কমিটি দিয়েই কাজ চালাতে হয়েছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নেতারা তেমন কার্যকরী ভূমিকা নেননি। বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

কাউন্সিলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর বিএনপির কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, পদ নেওয়ার ব্যাপারে নেতারা যতটা আন্তরিক, দায়িত্বেও প্রশ্নে তেমন আন্তরিক হলে কাউন্সিলের অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হতো। এছাড়া চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও স্থবিরতা এসেছে। কাউন্সিলে চেয়ারপারসনকে কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও, তার প্রায় পুরোটাই দলীয় প্রধান করেছেন। কিন্তু এরপরেও দায়িত্বপ্রাপ্তরা আন্তরিক হলে দল কিছুটা হলেও এগিয়ে যেত।

দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের পর কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্বপান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতোই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহাসচিব।

এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গত তিন বছরের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কাউন্সিল হওয়ার পর দল সংগঠিত হয়েছে। যে সব কর্মসূচি ছিল পালন করেছে। নির্বাচনের মতো একটা বিশাল কর্মকান্ডে দল অংশ নিয়েছে। প্রতিকূলতা ভয়াবহ রকমের ছিল। এই সময়ের মধ্যে দলের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়াকে বেআইনি ও অন্যভাবে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপরেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবেই আছে; ভালো আছে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.