শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

ছাত্রীর পায়ে গাড়ি তুললেন আইনের শিক্ষক, নিয়ে গেলেন না হাসপাতালেও

অনলাইন ডেস্ক: নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চলাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ওপর গাড়ি তুলে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। আহত দুই ছাত্রীর একজনকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ও পরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুর দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহতের সহপাঠীরা জানান, পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কর্মসূচি শেষ করে ক্যাম্পাস চলে আসেন। পরে ক্যাম্পাস থেকে টিএসসিতে যাওয়ার সময় প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের গাড়ি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ইমা আক্তার ও স্নাতক প্রথম বর্ষের আয়েশা মোমেনাকে ধাক্কা দেয়। ওই শিক্ষক নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়ির ধাক্কায় ইমা আক্তার দূরে ছিটকে পড়েন। অপরদিকে মোমেনা গাড়ির সামনে পড়ে গেলে তার পায়ের ওপর দিয়ে চাকা চলে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীরা গাড়িটি আটক করে আহত আয়েশাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ওই শিক্ষককে অনুরোধ করেন। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন তাতে অসম্মতি জানান। এর এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ভাঙচুর করেন।

পরে আয়েশাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাপালো হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আহত অপর শিক্ষার্থী ইমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দুই জন ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় একটি প্রাইভেট কার আমাদের ধাক্কা দেয়। আমি দুরে ছিটকে পরলেও আয়েশার ওপর পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। পরে আহত আয়েশাকে ওই শিক্ষকের গাড়িতে নিতে চাইলে তিনি রাজি হননি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থী আয়েশাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আয়েশার চিকিৎসার দায়িত্ব শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন নিয়েছেন।’

এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্রেক কাজ না করার জন্য দুর্ঘটনাটা ঘটে। আমি আহত শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। আর আমি তাকে গাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীর ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমার গাড়িতে হামলা চালায়।’

এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় বাস চাপায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। এ সময় আবরার নিহতের ঘটনায় জড়িত বাস চালকের শাস্তি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে স্প্রিড ব্রেকার নির্মাণসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ডাবল ট্রিপ চালু, প্রধান ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজ ও স্প্রিড ব্রেকার নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক থেকে লেগুনা স্টান্ডের দাবি জানান। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিতে ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় ফটকের সামনের লেগুনা স্টান্ড তুলে দিয়েছি। বাকি দুটি দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হবে।

 

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/নিঃতঃ

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.