শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

হুমকির মুখে সিংড়া-রতনপুর, বাড়ছে দুর্ভোগ

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিত অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে জেলার চার উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ১৯৪টি গ্রামের পানিবন্দি প্রায় আড়াই লাখ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছেই। দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকা বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দুর্গতদের অভিযোগ, অধিকাংশ এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি।
এদিকে, স্রোত ও পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়া-রতনপুর, কাতলামারী, রতনপুর, কঞ্চিবাড়ির কাইয়াহাট এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুর ও রাতে দু’বার সিংড়া-রতনপুর বাঁধে গর্ত হয়ে পানি বের হতে থাকে। ফলে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ও মাটির বস্তা ফেলে গর্ত মেরামত করে।
যেকোনও সময় ভেঙে যেতে পারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধজেলার মধ্যে ৬৮ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে অন্তত ২০টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে যেকোনও পয়েন্টের যেকোনও অংশ ভেঙে গেলে নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়বেন আরও মানুষ।
পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকাগুলোর মানুষদের মধ্যে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যর সংকট থাকায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। সেইসঙ্গে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ নারী-পুরুষরা। এসব এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে দুয়েকটি মেডিক্যাল টিম কাজ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমাণ অত্যন্ত কম।
ফুলছড়ির গুণভরি গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, ‘১০ দিন পানিবন্দি। ঘরের খাবার, হাতের টাকা শেষ। দু’দিন হয় খেয়ে না খেয়ে আছি। কিন্তু ত্রাণ তো দূরের কথা, চেয়ারম্যান-মেম্বারও খোঁজ নেয়নি।’
বন্যার পানিতে নিমজ্জিত একটি বাড়িরতনপুর চরের আতোয়ার মিয়া বলেন, ‘স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে আধপেট খেয়ে-না খেয়ে দিনা কাটে। কিন্তু এখনও কোনও সাহায্য পাইনি। কাজকর্ম নাই, হাতে টাকাও নাই। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতেই দিশেহারা।’
এর মধ্যে গত চার দিনে সাপের কামড়ে এক বৃদ্ধ এবং পানিতে ডুবে দুই শিশু ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, পানির তোড়ে সদর উপজেলার কামারজানির গো-ঘাট এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে শতাধিক বসতবাড়ি, জমি, গাছপালাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে আরও দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গত একমাস ধরে ভাঙনের পর নতুন ভাঙন অব্যাহত থাকলে গো-ঘাট গ্রামটি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীরা।
বন্যার পানিতে বসবাসতবে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটির বস্তা ফেলে ভরাট করার কাজ চলছে। এছাড়া, নদী ভাঙন ঠেকাতেও কাজ করা হচ্ছে। আর গো-ঘাট এলাকার ভাঙন স্থায়ীভাবে ঠেকানোর জন্য প্রকল্প হাতে নিয়ে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।’
গাইবান্ধা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৯৪টি গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার ১৩ জন। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ১৯৫ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ও এক হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার (১৫ জুলাই) আরও এক মেট্রিক টন চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করার কথা রয়েছে।
বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে বস্তাসর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যুমনা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি এখনও বিপদসীমার ২০.৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ঘাঘট নদীর পানি শনিবার সকালের তথ্য অনুযায়ী বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.