শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

সাংবাদিক শাহ্‌ আলমগীরের ইন্তেকাল

অনলাইন ডেস্ক: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক মো. শাহ্‌ আলমগীর আর নেই। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। গোড়ানের পৈতৃক বাসভবন প্রাঙ্গণ, পিআইবি প্রাঙ্গণ, জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ ও উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর মসজিদে চার দফা নামাজে জানাজার পর বিকালে উত্তরায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এদিকে শাহ্‌ আলমগীরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গণমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মরদেহ দেখতে সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ গণমাধ্যম কর্মীরা ছুটে যান হাসপাতালে।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমে রাজধানীর গোড়ানে পৈতৃক বাসভবনে তাঁর মরদেহ নেয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজার পর তার মরদেহ দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র পিআইবিতে নেয়া হয়।
সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নেয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাঁর তৃতীয় জানাজায় বিশিষ্ট সাংবাদিকরা অংশ নেন। পরে শাহ্‌ আলমগীরের মরদেহ নেয়া হয় উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে চতুর্থ জানাজা শেষে বিকালে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। সাংবাদিক শাহ্‌ আলমগীরের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড হাছান মাহমুদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পৃথক শোক প্রকাশ করেছেন।

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, বাসস-এর বার্তা প্রধান আনিস আহমেদ, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, মোল্লা জালাল, শাবান মাহমুদ, আবু জাফর সূর্য, শাহেদ চৌধুরী, মঈনুল আলম, কাজী রওনক হোসেন, নুরুদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

শাহ্‌ আলমগীরের পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হলেও বাবার চাকরির সূত্রে জীবনের বড় একটি সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে কাটিয়েছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্যে অনার্র্স ও মাস্টার্স করেন। উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা সাপ্তাহিক কিশোর বাংলায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। এ পত্রিকায় ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ ও সংবাদ-এ কাজ করেন তিনি।

প্রথম আলো প্রকাশের সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৩৫ বছরের দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি একাধিক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিণ্ট মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুগ্ম বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুুনা টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শাহ্‌ আলমগীর ২০১৩ সালের ৭ই জুলাই পিআইবি’র মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন।

সরকার ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাঁর চাকরির মেয়াদ আরও একবছর বাড়ায়। শাহ্‌ আলমগীর সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলেন। তার আমলে প্রেস ইন্সটিটিউট একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনি সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের কল্যাণ এবং সার্বিক উন্নতিতে কাজ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। শাহ্‌ আলমগীর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার-২০০৬, ‘চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক-২০০৫’, ‘রোটারি ঢাকা সাউথ ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০০৪’ এবং ‘কুমিল্লা যুব সমিতি অ্যাওয়ার্ড-২০০৪’ পেয়েছেন।

পারিবারিক জীবনে শাহ্‌ আলমগীর এক পুত্র ও কন্যাসন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন। ছেলে আশিকুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ পাস করে এইচএসবিসি ব্যাংকে কাজ করছেন। মেয়ে অর্চি অনন্যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিতে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে থাকতেন তিনি।

 

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/নিঃতঃ

Categories: মিডিয়া

Leave A Reply

Your email address will not be published.