মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে খুন খারাবি

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: উখিয়া-টেকনাফে ৩০টি আশ্রয় শিবিরে আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতার জের, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে অবলম্বনকে কেন্দ্র করে মারামারি, হানাহানিসহ ছুরিকাঘাতের মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় দুই ডজনের মতো রোহিঙ্গা নেতা খুন হয়েছে রোহিঙ্গাদের হাতেই। সর্বশেষ শীর্ষস্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা বালুখালীর আরিফ উল্লাহ মাঝি হত্যাকাণ্ডে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। এসব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এনজিও কর্মকর্তারা। এজন্য প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংশ্লিষ্টরা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করলে খুন-খারাবি করতে কোনোরূপ বিলম্ব করে না। রোহিঙ্গাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সরকারিভাবে প্রশাসনের লোকজন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এনজিও নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়ার কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করা হলে খুন-খারাবি কমবে।

উখিয়ার থাইংখালীর ময়নারঘোনা ক্যাম্পের আবু তাহের মাঝি জানান, রোহিঙ্গারা পরশ্রীকাতর। তারা অন্যের নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও এনজিও কর্মীরা থামাতে পারছে না। এসব নিয়ে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। তিনি জানান, গত বছরের ১৮ জুন রাত ৮টার দিকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা আরিফ উল্লাহকে নিজ বাসায় ফেরার পথে বালুখালী ১১ ব্লকের পাশের রাস্তার ওপরে সাত-আটজন দুর্বৃত্ত তাকে জবাই করে হত্যা করে। এ সময় তার চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের জানান, আরিফ উল্লাহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করছে। তবে পারিবারিকভাবে এখনো কেউ অভিযোগ না করায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না।

গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৪ ব্লকের বাসিন্দা মমতাজ আহমদ দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাঁচ-ছয়জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তাকে অপহরণ করে পাশের মধুরছড়া জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী রেনুয়ারা বেগম। এছাড়া গত বছরের জুন মাসে কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নামের এক রোহিঙ্গা সোর্সকে প্রতিপক্ষরা প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, নুরুল ইসলাম রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মের খবরা-খবর স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সরবরাহ করতেন। যে কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একইভাবে গত বছরের জুন মাসে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আল ইয়াকিনের সদস্যরা কুতুপালং ক্যাম্পে হানা দিয়ে ক্যাম্পের মাঝি মো. আইয়ুব ও তার পাশের বাড়ির মো. ছলিমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দুই দিন পর বালুখালী খাল থেকে অপহৃত মাঝিসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম প্রকাশ ডিপো জাফর বলেন, এখানে যেসব রোহিঙ্গা যুবক রয়েছে, তাদের অধিকাংশই আল ইয়াকিন, আরসাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, ক্যাম্পের ত্রাণ ভাগাভাগি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা পূর্বশত্রুতার জের ধরে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। যে কারণে ক্যাম্পে খুন-খারাবি বাড়ছে। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সাতটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও লোকবল সংকটের কারণে বা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দূরত্বের কারণে অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.