অনলাইন ডেস্ক: অনুমোদন পেল আরও ৩টি ব্যাংক। এর ফলে বর্তমানে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ৬২টি। ব্যাংক তিনটি হলো দ্য বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরুরি বোর্ডসভায় ব্যাংক তিনটির প্রাথমিক অনুমোদন লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারহা মোহাম্মদ নাসের বোর্ড মিটিং শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি ব্যাংকে এলওআই দেওয়া হয়েছে। তাদের ৪শ কোটি টাকার পরিবর্তে ৫শ কোটি টাকা মূলধন রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকালের পর্ষদ সভায় প্রধান আলোচ্যবিষয় ছিল নতুন ব্যাংক অনুমোদন। নির্বাচনের আগেই ৪টি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। গত বছরের অক্টোবরে ৫৯তম ব্যাংক হিসেবে এলওআই দেওয়া হয় পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের দ্য কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশের। গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকটি তফসিলিভুক্ত হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। বেঙ্গল গ্রুপের অধীনে বর্তমানে বিভিন্ন খাতের প্রায় ২০টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন নোয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম, যিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক। এর আগে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মোরশেদ আলম। এ ছাড়া তিনি ইউনাইটেড হসপিটাল ও পিপলস ইউনিভার্সিটির পরিচালক। পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের জন্য আবেদন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এ অধিবাসী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সিটিজেন ব্যাংকের আবেদনটি এসেছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পরিবার থেকে। আনিসুল হকের মা জাহানারা হককে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনপত্রে। কমিউনিটি ব্যাংক ছাড়াও গত বছরেই তফসিলভুক্ত ব্যাংক হিসেবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের লাইসেন্স পেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত ১৫টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি ব্যাংক অনুমোদন পেলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২টি। তবে ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আরও আবেদন জমা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাবটি স্থগিত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা নতুন ব্যাংকের বিষয়ে বরাবরই বিরোধিতা করে বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থায় দেশে আর ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। তাদের দাবি অর্থনীতির আকারের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে যা পুরো ব্যাংকিং খাতকে বেকায়দায় ফেলবে। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সবসময় ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন। দেশে এখনো অনেক মানুষ ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত বলে এর প্রসার ঘটানোর কথা বলেছেন তিনি। অর্থনৈতিক প্রয়োজন না থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে মুহিতের বরাবরই চাপ ছিল।
গত ২৫ সেপ্টেম্বরও এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে মুহিত লেখেন, “সম্ভবত, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রস্তাবিত একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আপনাকে প্রস্তাবিত সবগুলো ব্যাংককে একে একে লাইসেন্স দেওয়ার অনুরোধ করছি। সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দিতে সম্মত হয়েছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন।”
ঋণ কেলেঙ্কারির কয়েকটি বড় ঘটনায় গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাত আলোচনায় রয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি ব্যাংকও অনিয়ম আর তারল্য সংকটে ধুঁকছে। অনিয়মের কারণে ফারমার্স ব্যাংক নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ফারমার্সসহ এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককের চেয়ারম্যান, পরিচালকদের চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ এবং এমডিদের অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/নিঃতঃ