শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

জামায়াত দেয়ালে বিভক্ত ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনোভাবেই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি কোনোভাবেই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে পারছে না। এ থেকেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়ছে। এটা আরো স্পষ্ট হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিএনপির কোনো নেতা উপস্থিত না হওয়ায়।

এদিকে ড. কামালকে নিয়ে নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপির ভেতরে যে কানাঘুষা ছিল, তা ক্রমেই প্রকাশ হতে শুরু করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ছিল বেশ লক্ষণীয়। দলটির পুরনো মিত্র ২০-দলীয় জোটের অধিকাংশ নেতাই ফ্রন্টের সঙ্গে এমন দহরম-মহরম নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছুড়েছেন বিএনপি নেতাদের দিকে। এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর সে সময় বিএনপি নেতারা দেননি। এখন মধ্যমসারির বিএনপি নেতারা অনেকটা প্রকাশ্যে ড. কামাল বিরোধিতায় নেমেছেন।

রাজনৈতিক সব মহলে এখন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ফাটল নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির দূরত্বের মূলে রয়েছে জামায়াত। দলটির কট্টর বড় একটি অংশ প্রয়োজনে ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে জামায়াতের সঙ্গেই আগামী দিনের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে। জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের অনীহাকেও তারা অমূলক মনে করেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের রাজনীতি করে, বিএনপির রাজনীতি করে না। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলে যেমন রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়, তেঁতুল হুজুরও মিষ্টি হুজুর হয়ে যায়। তেমনি জামায়াতও তাদের সঙ্গে গেলে একসময় মিষ্টি হয়ে যাবে। মেজর হাফিজ আরো বলেন, আমরা একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এখন আমাদের এটিই মূল দাবি। এ দাবিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এটা নিয়ে বিভক্তি সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই।

জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সময় খবরে প্রকাশ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তেঁতুল থেকে মিষ্টিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। বিএনপির এখন একা চলাই ভালো। এটি দলীয় সিদ্ধান্ত। কারো চাপে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। একই সঙ্গে মেজর (অব.) হাফিজ আহমদ বলেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ এবং নির্বাচনের মাঠে জামানত হারানো নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া। দলে অনেক সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতা রয়েছেন। তাদের নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

এদিকে গত শনিবার গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর দলটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের একটি লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তাড়াতাড়ি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তা সংশোধন করে ভবিষ্যতের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ওই বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা অতীতে জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতির চিন্তাও করিনি। ভবিষ্যতেও পরিষ্কার, জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করব না। বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি বলা যেতে পারে। তারা যে ধানের শীষে জামায়াতের ২২ জনকে মনোনয়ন দেবে, সেটি আমরা জানতাম না। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির টিকিট পাবে জানলে ঐক্যফ্রন্টের অংশ হতাম না। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, আমি যদি আগে জানতাম জামায়াত নেতারা বিএনপির টিকিট পাবেন, তাহলে আমি এর অংশ হতাম না। যদি ওই ব্যক্তিগুলো ভবিষ্যতের সরকারে কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করে, আমি এক দিনও থাকব না।

হঠাৎ করে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামালের জামায়াত নিয়ে কথা বলাকে ২০-দলীয় জোটের অনেক নেতাই ভালোভাবে দেখছেন না। তারা মনে করছেন, যেখানে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম ও আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে, সেখানে নতুন করে হঠাৎ জামায়াত নিয়ে কথা বলার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। এটা জাতীয় ঐক্যের ফাটল ধরানোর নীলনকশাও হতে পারে।

এ বিষয়ে ২০-দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল মোটেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের অনুকূলে হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করেছে, তার বিরুদ্ধে সবাই এখন সোচ্চার। দেশ-বিদেশে সবাই এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ মুহূর্তে আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ থাকা। কিন্তু এখন কেন ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের বৈধতা এবং তার পরবর্তী করণীয় নিয়ে কথা না বলে জামায়াত ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছেন, সেটি চিন্তার বিষয়।

তিনি বলেন, যেহেতু বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট ২০ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই এ বিষয়টি নিয়ে তাদেরই ভাবতে হবে। আমার মনে হয়, একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০-দলীয় জোটে ফাটল ধরাতে একাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন বা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ থাকা নিয়ে কথা না বলে জামায়াত নিয়ে কথা বলছে। যাতে বিরোধী জোটে ফাটল ধরে, একই সঙ্গে আন্দোলন না হয়।

এ বিষয়ে জোটের অন্য একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগে বিএনপিকে আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে গণফোরামে সংসদে যোগ দেওয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি করা। বিএনপি যদি এটা নিয়ে কিছু না বলে, এই ইস্যুতে গণফোরামের দুই সদস্য শপথ নিয়ে নেবেন। যদিও দলটি বলেছে, ভোট ডাকাতির কারণে তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। তাদের এই বক্তব্য শুধুই আইওয়াশ বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.