বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

আতঙ্কের নাম! “খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পুলিশবক্স”!

  • বিষেরবাঁশী ডটকম

*ফতুল্লা থানাধীন ঢাকা-না’গঞ্জ সংযোগ সড়কে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুলিশবক্সে আধ ঘন্টার ভায়ঙ্কর অভিজ্ঞতা*

বক্সের ভেতরে বসে আছেন একজন এএসআই; নাম; মিজান। বক্সের বাইরে ৪/৫ জন কনস্টেবল বিভিন্ন বাহন থামিয়ে পকেট,লাগেজ,মানি ব্যাগ,মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেহ তল্লাশি করে নানা অবান্তর প্রশ্নে ভীতসন্ত্রস্ত করছিলেন। ঢাকাগামী বাস থামিয়ে দুই ক্ষুদে ব্যবসায়ীকে নিচে নামিয়ে আনেন। একজনের ব্যাগ তল্লাশি করে ৪/৫ কেজি পরিমান হোসিয়ারি গার্মেন্টস প্রোডাক্টের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান। তিনি ভয়ে কাঁপছেন! আরেকজনের পকেটে পাওয়া কয়েকশ ইউএস ডলার কোথায় পেলেন? বৈধ কাগজ আছে কিনা? ইত্যাদি প্রশ্ন…। এদিকে তাঁদের রেখেই বাস চলে গেছে। কনস্টেবলরা আরো বাস আটকাচ্ছেন। যাকে খুশী তাকেই নামিয়ে বাস ছেড়ে দিচ্ছেন। আসামীর মকো করে তন্নতন্ন করে কথিত তল্লাশির নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে আড়ালে নিয়ে রফা করে ছেড়ে দিচ্ছে। মনে হতে পারে ‘কর্তব্যপরায়ন’ পুলিশ দেশোদ্ধারে মহাব্যস্ত! মাঝেমধ্যে এএসআই মিজানের কানেকানে কনস্টেবল ফিঁসফিঁস কিযেন বলে আটকদের মুক্তি দিচ্ছে। এ’মহোৎসব’ চলছিল আমার সামনেই।  এএসআই কনস্টেবল থেকে এএসআই হওয়ার গল্প বলার ফাঁকেফাঁকে কনস্টেবলদের প্রয়োজনীয় শলাপরামর্শও অব্যহত রাখছিল!
বাইক চালক,মালবাহী ছোট পিকআপ,ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস এমনকি পথচারীরা কেউ এঁদের টার্গেট থেকে রেহাই পাচ্ছেন না! কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি!

*আমি কেন সেখানে ছিলাম?
১ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় ফোনে খবর পাই- আমার গাড়ির ড্রাইভার আলমকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে বক্সে আটক করে রেখেছে।
চেকপোস্টের পাশে একটি ওয়ার্কশপে আমার প্রাইভেটকারের কাজ করাই। ড্রাইভার সেখানেই যাচ্ছিল।
আমি বাসা থেকে ড্রাইভারকে ফোনে জানতে চাই কী অপরাধ করেছো?
ড্রাইভার একটু বোকা টাইপের। ও আমাকে সরলভাবে পুলিশের সামনে বসেই উত্তরে যা বলল; স্যার,
আমাকে সারা গতর হাতাইয়া ধমকাইয়া ছাইড়া দিছিল। আমি কইছি,”আপনারা নিরীহ মানুষরে বেহুদা হয়রানি করেন? একথার কারণে আমারে আবার হ্যান্ডকাপ লাগাইয়া বসাইয়া রাখছে!”
আমি তখন ওকে বলি,তুমি একথা বলতে গেলে কেন?
যাহোক, সেখানে কে আছে, ফোনটা দাও কথা বলি। এএসআই সিজান সাহেব আমার সাথে কথা বলবেননা। তিনি আমাকে সেখানে যেতে বলছেন। কথা বললেনই না!
যাহোক আমি শেষপর্যন্ত নিজেই গেলাম। চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। তারপর ছেড়ে দেন।
আমি যতক্ষণ ওখানে বসা ছিলাম, ততক্ষণ যা দেখলাম; এসব তল্লাশিকে বানিজ্য ছাড়া আর কিছু বলা যায় কিনা আমার জানা নেই।

*গাড়ি ডেলিভারি আনতে বিকেল ৩ টার পর আবার সেই ওয়ার্কশপে যাই।

পুলিশবক্সের গা ঘেঁষা সেই ‘আলমের গ্যারেজেে’ কিছুক্ষণ বসে প্রত্যক্ষ করি সকালের একই দৃশ্য ! বাস থেকে নিরীহ যাত্রীদের নামিয়ে যেভাবে হয়রনি করা হচ্ছে তা রীতিমতো ডাকাতি!  প্রকাশ্যে এরকম জুলুম পুলিশের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ ঘটনার পর গতকালই আমার ‘ ড্রাইভারকে’ অব্যহতি দেই। শুধুমাত্র একারনে নয়, আরো কিছু বিশেষ ত্রুটির কারনে এই ড্রাইভারকে গতকালই বিদায় করি।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঃ
**********************
নতুন ড্রাইভারের নাম ইমরান। গতকালই নিয়োগ দিয়েছি। ওয়ার্কশপে থাকা গাড়িটি ডেলিভারি আনতে গেলে তাঁকেও(ইমরানকে) অকারনে পুলিশবক্সে বসিয়ে রাখে। ড্রাইভার ইমরান নিজের চেষ্টায় ১ ঘন্টা পর অবশ্য ছাড়া পান।

দ্বিতীয় এই ঘটনার পর ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদেরকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,” দাদা আমাকে এসব ব্যাপারে কেউ কোনদিন অভিযোগ করেননি।
বিষয়টি অবশ্যই দোখব।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.