শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

জোটভুক্তদের আসন আরো কমাতে পারে আওয়ামী লীগ

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: মহাজোটের শরিকদের ঠিক কতটি আসন দেবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ২৩ ডিসেম্বর ২৩০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়। পরের দিন বাকি ৭০ আসনসহ সংসদীয় ৩০০ আসনে একযোগে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু কৌশলগত কারণ দেখিয়ে সে ঘোষণা থেকে সরে আসে দলটি। কবে নাগাদ হতে পারে তাও বলা হচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষেই এই তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।

ফলে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে নানা ধরনের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনী রাজনীতিতেও। বিশেষ করে আসন সমঝোতার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী সম্পর্ক নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ উদ্বেগে আছেন দলীয় ও শরিক দলের প্রার্থীরাও। কেননা শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীর মনোনয়নের বিষয়টি। দলীয়ভাবে মনোনয়ন ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা পায় কি না সে নিয়েও চিন্তিত অনেক প্রার্থী।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মুখে যদিও মহাজোট শরিকদের জন্য আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ৭০টি আসন ছাড়ার কথা বলছে; কিন্তু এই সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আসন ভাগাভাগি নিয়ে ক্ষোভের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কিছু ক্ষোভ তো থাকতেই পারে। এত বড় জোট। এখানে তো ক্ষোভ-বিক্ষোভ কিছু হবেই। সেই ক্ষোভ প্রশমিতও করা হবে। তবে শরিকদের কতটি আসন ছাড়া হবে তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি।

সূত্রগুলো আরো বলছে, এমনিতেই শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। তারপরও নির্বাচন কমিশনে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে শরিকদের মধ্যে। কেননা দল ২৩০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দিলেও ২৬৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৮১ জন প্রার্থী। অর্থাৎ দলের ১৭ প্রার্থীকে এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে হবে। অবশ্য জোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় শরিকরাও নিজেদের মতো করে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ৩৬টি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আরো অন্তত ২০টি আসন থেকে শরিকদের সমর্থনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করবে। তবে এতেও সন্তুষ্ট নয় শরিকরা। জাতীয় পার্টি (জাপা) একাই চায় অন্তত ৫০ আসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ২৭টি আসনে নিশ্চয়তা পেয়েছে। আশ্বাস মিলেছে ৩৫টি পর্যন্ত। তাও মানছে না দলটি। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে জাতীয় পার্টিতে। এরই মধ্যে দলের কিছু নেতা অন্য দলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীও হচ্ছেন কেউ কেউ। আর দল ২১০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, তারা অন্তত ৫০ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আওয়ামী লীগ কতটি আসন দেবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানান।

জাতীয় পার্টি ছাড়া মহাজোট ও ১৪ দলের কোনো শরিককেই ৫টির বেশির আসন ছাড়তে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। জোটের বাকি ১০ নিবন্ধিত দলকে সর্বোচ্চ ১৭টি আসন ছাড়তে পারে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ দলগুলোর প্রার্থী সংখ্যা এর অন্তত ১০ গুণ। সংসদে ৬টি আসন থাকা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এ ব্যাপারে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, তাদের ৫টি আসন দেওয়া হয়েছে। আরো দু-তিনটি আসন চান তারা। তা হলেই চলবে।

জাসদের দুই অংশের সংসদ সদস্য আছেন পাঁচজন। এর মধ্যে জাসদে (ইনু) আছেন তিনজন সংসদ সদস্য। তাদের আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারা ৫৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, তাদের তিনটি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। আরো কয়েকটি আসন পেতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দেওয়া বিকল্পধারা ৩৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে মনোনয়নের নিশ্চয়তা মিলেছে তিনটি আসনে। দলটি আরো কয়েকটি আসন পেতে দরকষাকষি করছে। বিকল্পধারা শরিক মুক্তিজোট একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে তারা মহাজোট থেকে কোনো আসন পাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ জোটের তরীকত ফেডারেশনের হাতে আছে দুইটি আসন। এবারও তাদের দুইটি আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত। তবে তারা প্রার্থী দিয়েছে ২০টি আসনে। জাকের পার্টির এখনো আসন পাওয়া নিশ্চিত হয়নি। একটি আসন তাদের দিতে দরকষাকষি চলছে। দলটি ১০৫ আসনে ১০৮ জন প্রার্থী দিয়েছে। জেপি চায় দুইটি আসন। তাদের একটি আসন পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। তারা মনোনয়ন দিয়েছে ১৭টি আসনে। তবে ১৪ দলের ন্যাপ, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি এবারও আসন পাচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর মধ্যে ন্যাপ ১৪, সাম্যবাদী দল ৩ এবং গণতন্ত্রী পার্টি ৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি সতর্কভাবে দেখছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। তাদের মতে, জোট শরিকরা সবাই প্রার্থী দিতে চান। সবাই নিজেকে যোগ্য মনে করছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচন যেহেতু তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে; তাই কিছুতেই ঝুঁকি নেবেন তারা। হাজার চাপেও বাস্তব অবস্থা থেকে সরে আসবে না দলটি। এজন্য ভোটের মাঠে জয় পেতে শরিকদের সক্ষমতা যাচাইয়ের কাজটি আওয়ামী লীগকেই করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে আবেগ থাকতে নেই। তাই দল অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। মহাজোটের শরিকদেরও বলেছি নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিতে। মাঠের ও ভোটের পরিস্থিতি বুঝে জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.