শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

সোনারগাঁয়ের তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেলেন বিতর্কিত জামায়েত ইসলামের রোকন নাজমুল!

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: সোনারগাঁয়ের তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসায় গত শুক্রবার শূন্য পদে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারো নিয়োগ পরিক্ষার পূর্বেই টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান জামায়েত ইসলামের রোকন নাজমুল হোসেন পাটোয়ারি। পরিক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন দিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করে গর্ভনিং বডির সভাপতি কথিত জাতীয় পার্টির নেতা অখিল উদ্দিন মেম্বার ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রধান এবং মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ও সহকারী শিক্ষক নূরনবী। পরিক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে গতবারের পরিক্ষায় ৬ষ্ঠ স্হানে থাকা নাজমুলককে এবারে নিয়োগ দেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এমনকি সকল পরিক্ষায় তৃতীয় বিভাগ পাওয়া নাজমুল পাতানো পরিক্ষায় প্রথম হয় এমন অভিযোগ করেন স্হানীয় এলাকাবাসীর। এদিকে, মাদ্রাসাটিকে জামায়েত শিবিরের প্রভাবমুক্ত রাখতে এবং গর্ভনিং বডির অবৈধ ও ফাসকৃত প্রশ্নের নিয়োগ বন্ধ করতে প্রায় ৩ শতাধিক এলাকাবাসির স্বাক্ষরিত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কপিসহ একটি অভিযোগ চলতি বছরের জুলাই মাসের ৭ তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট জমা দিয়েছে, যাহার প্রাপ্তি নং ৪৮৯৫। আর দরখাস্তের অনুলিপি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, সোনারগাঁ থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে। কিন্তু লিখিত অভিযোগ ও স্হানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের পরও শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে এবং মাদ্রাসাটিকে শিবিরের আখড়া বানাতে নিয়োগ দেন কথিত জাতীয় পার্টির নেতা অখিল উদ্দিন মেম্বার।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের ১৭ তারিখে তাহেরপুর মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তখন গর্ভনিং বডির সভাপতি ও কলেজের একটি সিন্ডিকেট বিশাল অংকের টাকা নিয়ে একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী ও জামায়েত ইসলামের রোকন নাজমুল কে নিয়োগ চূড়ান্ত করে। কিন্তু স্হানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিধি মোতাবেক পরিক্ষা নিতে বাধ্য হয়। তখন পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন ৬জন। গর্ভনিং বডির মনোনীত প্রার্থী জামায়েত ইসলামের রোকন নাজমুল পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয় এবং ৬ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে মেধা তালিকায় ৬ নাম্বার হয়। নিয়োগ পায় নুরুল ইসলাম। নিয়োগ পাওয়ার পর মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রান নাশের হুমকি দিলে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন নুরুল হক।

এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বর্তমান গর্ভনিং বডির কতিপয় দুর্নীতিবাজ সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হকের পরিবারের সদস্যদের সহযোগীতায় অতি গোপনে একটি নামসর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার এজহারভূক্ত আসামী ও জামায়েত ইসলামীর রোকন নাজমুল ও তার দুই আত্মীয়কে দিয়ে আবেদন করানোর চেষ্ট্রা করেন। এমনকি অতি গোপনে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি চেয়ে অাবেদন করেন। যাহার নং ৪৫২৪, তারিখ- ১০.০৬.২০১৮। এতকিছুর পরও প্রশ্ন ফাস করে নাজমুলকে নিয়োগ দিয়েছে বিতর্কিত গর্ভনিং বডির সভাপতি অখিল উদ্দিন,গর্ভনিং বডির সদস্য ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষক।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হকের মেয়ের জামাতা সোনারগাঁ থানা জামায়েত ইসলামের অন্যতম সংগঠক ও সকল পরিক্ষায় তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত নাজমুল হোসেন পাটোয়ারীকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে সহকারী শিক্ষক নূরনবীর মাধ্যমে মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছেন গর্ভনিং বডির সভাপতি অখিল উদ্দিন মেম্বার। তিনি থা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে এবং নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্যদের ম্যানেজ করে নিয়োগ দিয়েছে এই গুনোধরেরা। অস্বচ্ছ ও বিধি বহিঃভূতভাবে নিয়োগ প্রদান করায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে এলাকাবাসী। এমনকি তারা জানায়, এই নিয়োগ তারা মানবে না। তাকে অপসারন করতে যা লাগে তাই করবে স্হানীয় এলাকাবাসী। এদিকে, জামায়েতের রোকন সাদিপুর সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক নাজমুল হোসেন পাটোয়ারি বর্তমান কর্মস্থলে গিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ বছর পূর্বে সাদিপুর ইউনিয়ন পুরোপুরি জামায়েত শিবির মুক্ত ছিল। নাজমুল ইসলাম পাটোয়ারি সাদিপুর মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকেই সাদিপুর ইউনিয়নে জামায়েত শিবিরকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়।

মূলতঃ তার নেতৃত্বেই মিরেরটেক, কলতাপাড়া, সাদিপুর ও বস্তল এলাকায় সরকার পতনের জন্য কয়েক দফা হামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ টি নাশকতার মামলা রয়েছে। এই মামলায় কয়েকমাস হাজত বাসের পর বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছে। বর্তমানে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে সাদিপুর ইউনিয়নে তেমন কার্যক্রম চালাতে পারছে না জামাত-শিবির। তাই জামায়েত ইসলাম মরিয়া হয়ে উঠেছে নাজমুল হোসেন পাটোয়ারিকে পিরোজপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ করে গোপনে মেঘনা, মোগরাপাড়া, শম্ভুপুরা এলাকা গুলোতে জামায়েত মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলে জামাত-শিবির শক্তিশালী ঘাটি প্রতিষ্ঠা করা।

এলাকাবাসী এই জামায়েত নেতার সকল ফিরিস্তি নিয়োগ বোর্ডের কাছে প্রদান করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়েত নেতাকে বসানোর পায়তারা দেখে এলাকাবাসী শংকিত ও চরম ক্ষুদ্ধ। এ বিষয়ে তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসায় গর্ভনিং বডির সভাপতি অখিল উদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোন দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় নি। জামায়েত ইসলামীর রোকন নাজমুল কে টাকা নিয়েে নিয়োগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.