শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ না হলে রাজনীতি ছাড়তে হবে আমাকে

বিশেরবাঁশী ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তার এই আহ্বানের প্রতিফলন না দেখলে নিজের পদ ও রাজনীতি ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার (১৪ নভেম্বর) তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দলের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, গণভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরপর দুই বার ক্ষমতায় এসেছি বলে হয়তো অনেকেই মনে করছেন, আবার ক্ষমতায় আসবো। কিন্তু এই ভাবনা ভুল। আমি একটা অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি, এই দেশকে নিয়ে আবার খেলার চেষ্টা হচ্ছে। যে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসে এদেশের বিজয়কে ছিনিয়ে নিয়েছিল, তারা আবারও চক্রান্ত করছে। কিন্তু আমি তা হতে দিতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো বলেই হাজারো ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেছি। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেও দলকে সংগঠিত করেছি। তাই কারও চক্রান্ত সফল হতে দেবো না। দেশ ও জনগণকে নিয়ে খেলতে দেবো না। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যদি তা না করেন, তাহলে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। আমাকে আর পাবেন না। মনে রাখবেন নেত্রীকে বেটে খাওয়ালেও জয় আসবে না। জয়ের জন্য নেত্রীর লাগবে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এটাই হলো বাস্তব কথা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী পালন করতে হবে। কেবল আমরা সরকারে এলেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক আকারে উদযাপন করতে পারবো। অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে জাতির পিতার নামই মুছে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কাজেই এই সরকারকে রাখার ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীকে ভাবতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬ সালে সরকারে এসে বিশ্বের নামি-দামি নেতাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পালন করেছিলাম। ২০২১ সালেও সেভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই। সেজন্য আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। আর সরকার গঠন করতে হলে আমাদের সিট পেতে হবে। নির্বাচনে জিততে হবে। সরকারের ম্যান্ডেট থাকতে হবে। সেজন্যই ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ২০১২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত দেখতে চাই। আমি বিশ্বাস, আগামীতে যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে এই দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা ডেলটা প্ল্যান নিয়েছি।

যদি আমরা সরকারে থাকি, তাহলে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে উন্নয়নশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। আর এসব করতে হলে ক্ষমতায় আসতে হবে। ক্ষমতায় আসতে পারবো, যদি আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সিট পাই।’ ২০০১ সালের অবস্থা যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা পরপর দুই টার্ম সরকারে। আপনাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, তারা ১৫ আগস্ট দশ বছরের শিশু রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল, যেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের রক্তের কেউ বেঁচে থাকতে না পারে, যেন আওয়ামী লীগ কখনোই ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হলেও আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে। জনগণের জন্য কাজ করছে।

দেশের উন্নয়ন করছে।’নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস ও আস্থা আনতে হবে। আর নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতিটা হয়, এটা দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে। এখন আপনাদের কাছে আমার দাবি, আমি এই পর্যন্ত আপনাদের কাছে কিছু চাইনি। যতটুকু পেরেছি, দিয়েছি। আমার জীবনটকে উৎসর্গ করেছি এদেশের জন্য, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য। দলের নেতাকর্মী আমার কাছে এসে বিমুখ হয়ে যাননি। যাদের যেভাবে পেরেছি, সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আজ আপনাদের কাছে আমার চাওয়ার আছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। এক হয়ে দলকে আবারও বিজযী করবেন।’ তাহলেই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.