বিষেরবাঁশী ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। প্রার্থীরা এককভাবে অংশ গ্রহণ করবেন, নাকি মহাজোট গঠন করে হবে, তার ওপর নির্ভর করছে প্রার্থিতা। তবে বহুদলীয় প্রার্থীদের লড়াই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে প্রত্যাশীদের মধ্যে। গত নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা সোনারগাঁ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সোনারগাঁ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিয়ে চলছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যে যার মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া থেমে নেই এলাকায় সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এবার দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। তবে সোনারগাঁয়ে বিভক্ত আওয়ামী লীগের মাঝে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসনে ব্যর্থ হলে এবং তৃণমূলের প্রত্যাশা অনুযায়ী, প্রার্থী মনোনয়ন না দিলে বিজয় নিয়ে শঙ্কিত আওয়ামী নেতাকর্মীরা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিমত, এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যে কজন মনোনয়ন চাইবেন তারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। দলের কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে আবারও কোন্দল দানা বেঁধে উঠতে পারে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূল কাউন্সিলের বিকল্প নেই।
সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান কালাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (সাচিব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম মাসুদ দুলাল ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অধ্যাপক ড. সেলিনা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, বিগত দিনে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমার নিরলস পরিশ্রম, মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরা এবং দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষায় আমি আশাবাদী, আওয়ামী লীগ আমাকেই মূল্যায়ন করবে।
২০১৪ সালে নির্বাচনের অংশ গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমে মোশারফ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হন। সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সে সময় দলের জন্য ত্যাগ শিকার করে আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নেই। দল সেই ত্যাগের কথা স্মরণ করে এবার আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান কালাম আওয়ামী রাজনীতিতে সোনারগাঁয়ের মাঠে বেশ সক্রিয়। বিগত সময়ে তিনি দলীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরব ছিলেন। বর্তমানেও তিনি দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনের কাতারে থেকে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি দল অবশ্যই বিবেচনা করবেন বলে আমি আশাবাদী।’
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অল্প সময়েই সাড়া ফেলেছেন। তিনিও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম মাসুদ দুলাল বলেন, দলের তরুণ প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছি। সোনারগাঁ থেকে নৌকার মনোনয়ন পাব বলে আমি আশাবাদী। জোট হলে হয়তো রাজনৈতিক পেক্ষাপট বদলে যেতে পারে। তাই এই বিষয়ে আমি আগাম কিছু বলতে পারছি না।’
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার নিজের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে এবং মনোনয়ন দেয়, তাহলে সবাইকে নিয়ে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসন থেকে নৌকা উপহার দেব। তাছাড়া নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, তার পক্ষেই মাঠে কাজ করব।’
দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম, হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রচার প্রচারণায় মাঠে নেই বললেই চলে। গত কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁয়ে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নেতাদের অংশগ্রহণমূলক তৎপরতা না থাকলেও এখন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নীরবে প্রচারণায় নেমেছেন বলে জানা গেছে। সুযোগ পেলেই নেতারা কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সংস্কারপন্থি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম মান্নান। এই আসনে আরো সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল।
স্থানীয় বিএমপির নেতাকর্মী ও রাজনীতিকদের মতে, দলের দুঃসময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে একমাত্র আজহারুল মান্নানই দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দলের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল জনসর্মথনে ভোট যুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ দিক দিয়ে সম্ভাব্য সব প্রার্থীর তুলনায় মান্নানের পাল্লা অনেক ভারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জিয়া অরফানেস টাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর সাজা হওয়ায়, তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এখন আন্দোলনমুখী হচ্ছে। এ সময় খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে দলটি আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে।
এদিকে, জোট রাজনীতির কৌশলে গত নির্বাচনে সোনারগাঁ আসনে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে যেকোনো সভা-সমাবেশে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণী তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রীয় আছেন তিনি। এবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসাইন মৌসুমী সব জায়গায় এরশাদের পালিত কন্যা হিসাবে দাবি করেন। গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত মৌসুমীও এবার জোর তদবির চালাচ্ছেন। সম্প্রতি এরশাদের ‘সবুজ সংকেতে’ গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। হঠাৎ তার গণসংযোগে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত নির্বাচনের পর অনন্যা হুসাইন মৌসুমীকে এলাকায় দেখা যায়নি। মৌসুমী বলেন, ‘এবার আমিই মনোনয়ন পাব নিশ্চিত। পিতার আশীর্বাদ রয়েছে আমার সঙ্গে। মনোনয়ন পেলে আমিই নির্বাচিত হব।’
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়