- জঙ্গিরা ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেয় মিজানকে খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের মূল হোতা মিজান তাকে ধরতে পুরষ্কার ঘোষণা করে দুই দেশ
বিশেরবাঁশী ডেস্ক: অবশেষে প্রিজন ভ্যানে গুলি করে ছিনিয়ে নেয়া জেএমবি’র শীর্ষ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান ভারতে গ্রেফতার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকার কাছাকাছি রমন নাগরার একটি বাড়ি থেকে বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। বোমারু মিজানের অবস্থান করা বাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বিহার প্রদেশের বুদ্ধগয়ায় এ বছরের শুরুর দিকে দালাই লামার সফরের সময় যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনেও ছিল বোমা মিজান। তাকে ওই মামলায় বিহারের পাটনার আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের মূল হোতা এই বোমারু মিজান। ওই ঘটনায় এনআইয়ে তাকে গ্রেফতার করার জন্য ১০ লাখ রুপি পুরুষ্কার ঘোষণা করে। ভারতের এনআইয়ে জানিয়েছে, বোমারু মিজানের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন ওরফে তুহিন এবং আব্দুল করিম ছোটা নামে আরো দুই জেএমবি নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
সূত্র জানায়, জঙ্গি মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমা মিজান মূলত ‘বোমারু মিজান’ নামেই বেশি পরিচিত। আর ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তার নাম ‘কাওসার’। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে বোমা মেরে ও গুলি করে আরও দুই জঙ্গির সঙ্গে বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি দুই জঙ্গি ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিব ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ। এর মধ্যে হাফেজ মাহমুদকে ওই দিন রাতে টাঙ্গাইলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটক করে পুলিশ। পরে গভীর রাতে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। অন্যদিকে বোমারু মিজান ও সালেহীনের আর খুজেঁ পাওয়া যায়নি।
তেজগাঁও পলিটেকনিকের ছাত্র বোমারু মিজানকে ২০০৯ সালের ১৫ মে পূর্ব মনিপুর পাড়ার একটি বাড়ির বোমা তৈরির কারখানা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই সময় র্যাবের ওপর গ্রেনেড হামলা চালাতে গিয়ে বোমারু মিজানের স্ত্রী শারমিনের বাম হাত উড়ে যায়। শারমিন এখনও কারাবন্দী। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলায় আদালত ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দেশে ১৮ টি মামলা বিচারাধীন। বোমারু মিজানের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি দেশের ৬৩ টি জেলার প্রায় সাড়ে ৫শ’ স্পটে সিরিজ বোমা হামলা চালায়। হামলায় ব্যবহৃত বোমার মূল কারিগর ছিলেন বোমারু মিজান। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়য়ে জেএমবির শূরা কমিটির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সালেহউদ্দিন, আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ ৭ জন গ্রেফতার হলে বোমারু মিজানকে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। বোমারু মিজানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় বোমা হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় জেএমবি সদস্যরা। তখন থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার পর বোমারু মিজান থাকতেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। সেখানে জেএমবি’র জঙ্গিদের বোমা তৈরির কৌশল শেখাত। বীরভূমে বিয়ে করেন। একটি মাদ্রাসায় পড়াতেন। বেলডাঙাতেই তার সঙ্গে থাকত হাতকাটা সোহেল মাহফুজ ও সাকিল গাজী নামে দুজন জেএমবি’র নেতা। সপ্রতি এনআইএ’র কাছে খবর আসে বেঙ্গালুরুতেই কোনও এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন মিজান। তবে, তার যে চেহারার ছবি এনআইএ’র কাছে ছিল চারবছরে তা অনেকটাই বদল হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে বুরহান শেখকে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশের টাস্ক ফোর্স। এনআইএ তাকে জেরা করে। এরপর সোমবার রাতে কর্নাটক পুলিসের দেওয়া সূত্রে মিজানের খোঁজ মেলে। ভারতে তার পরিচয় কাওস্র নামে। তাই সে নিজের পুরনো নাম ব্যবহার করছিল। আর তাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল, জেরায় মিজান জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিল। কখনও কলের মিস্ত্রি, কখনও বা মেকানিকস সেজে। তার বেঙ্গালুরুর ঘরে হানা দিয়ে বেশ কিছু কাগজপত্র এবং বোমা তৈরির যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়েছে।
এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ব্যবহার না করায় মিজানকে ধরা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় আলাদা নামে ভ‚য়া পরিচয়পত্র তৈরি করে কাজ চালাচ্ছিল। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর পালিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। পরে ফের ভারতে চলে আসে। উত্তরপ্রদেশে কয়েকটি জায়গায় আত্মগোপন করেছিল। এরপর বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের ছক কষে।
বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাত/ইলিয়াছ