বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

পিন্টুর শেল্টারদাতা মোল্লা মামুনের অজানা কাহিনী

বিষেরবাঁশী ডটকম: নারায়ণগঞ্জের কালিরবাজারের স্বর্ণ পট্টির আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী পিন্টু গ্রেপ্তারের পর থেকেই আলোচনায় উঠে আসে পিন্টুর কথিত ‘বড় ভাই’ তথা তৃতীয় পক্ষের নাম। এক পর্যায়ে আদালতে পিন্টু তার জবানবন্দিতে ওই বড় ভাইয়ের নাম বলেছে। ওই বড় ভাই প্রবীর ও পিন্টুর সম্পর্কে ফাটল ধরায় এবং প্রবীরের বিরুদ্ধে পিন্টুকে বিষিয়ে তোলে। পিন্টু পরকীয়া প্রেমিকা রত্না রানী চক্রবর্তীকে আটকের পর তার তথ্যমতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সেই বড়ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুন ওরফে মোল্লা মামুন (৫০)কে গ্রেপ্তার করে ডিবি। সেই সাথে বেড়িয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তাকে ২১ মাস আগে নিতাইগঞ্জ থেকে অপহৃত স্বপন কুমার সাহা অপহরণ মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তার কাছ একটি খেলনা পিস্তুল উদ্ধার করেছে ডিবি। স্বপন সাহার ববহৃত ২টি মোবাইল পাওয়া যায় রত্না রানীর কাছে। গত ২১ মাস ওই মোবাইল দুটি তার কাছে ছিল। মোবাইলের সূত্রধরে আটক হয় মোল্লা মামুন। ডিবির তদন্তে মোল্লা মামুনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। কে এই মামুন?

মামুনের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় তার জন্ম আমলাপাড়াতেই। ছয় ভাই এর মধ্যে সবার বড় তিনি। স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই (মোল্লা বাড়ি) থাকতেন। তার ভাইএর মাধ্যমে জানা যায় এক সময় তিনি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে গার্মেন্টসের টি-শার্ট প্রিন্টিং এর ব্যবসা করতো। প্রায় পাঁচ বছর আগে বড় ধরনের লোকশানের কারনে ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনি কি করেন তা বলতে পারেন নি মামুনের ভাই মাহফুজ।

স্বপন হত্যাঃ প্রবীর ঘোষ হত্যাকান্ডের তদন্ত করতে গিয়ে বড় যে চাঞ্চল্যকর তথ্য ডিবির হাতে আসে তা হচ্ছে প্রায় ২ বছর আগে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমারকে প্রথমে গুম ও পরে তাঁকে হত্যার তথ্য। প্রবীর হত্যার প্রধান আসামী পিন্টুকে গ্রেপ্তারের পর স্বপনের পরিবারের কাছে সন্দেহ হলে তারা ডিবিকে জানায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পিন্টু তার পরকীয়া প্রেমিকা রত্না চক্রবর্তীর তথ্য পায়। রত্নার কাছে স্বপনের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল উদ্ধার করে ডিবি। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয় মামুনকে।

স্বপনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্বপন প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা করলেও পরবর্তিতে পাসপোর্টের দালালি শুরু করে। প্রতিদিন স্বর্ণপট্টিতে খোকন নামে কোনো একজনের চায়ের দোকানে আড্ডা জমাতো সে। সেখান থেকেই পিন্টু ও মামুনের সাথে পরিচয় ঘটে স্বপনের। মামুনের বড় ভাইয়ের মতেও ব্যবসায়ীক কোনো কারণে নয়, এই আড্ডা থেকেই তাদের পরিচয় হয়।

স্বপন হত্যার কারণঃ মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্লাট বাসা ক্রয় করে। ওই ফ্লাট স্বপনকে না দিয়ে বরং হুমকি দিচ্ছিল। এসব কারণে ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিত। নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে প্রবীর ও স্বপন মিলে তার দোকান ও ফ্লাট হাতিয়ে নিবে বলে প্রবীর ও স্বপনের নামে নেতিবাচক কথা বলতে থাকে পিন্টুর কাছে। তখন থেকেই স্বপন ও প্রবীরের প্রতি ক্ষোভ জন্মাতে থাকে পিন্টুর এবং তাদেরকে হত্যার পরিল্পনা করতে থাকে ।

একই ভাবে প্রবীর হত্যাঃ পিন্টু ডিবির কাছে স্বীকার করে,মামুন তাকে নিজে আলাদাভাবে ডেকে বলেছিলো প্রবীর তার বন্ধু কি না? তখন পিন্টু বন্ধু হিসেবে স্বীকার করে। তখন মামুন পিন্টুকে উত্তেজিত করার জন্য পিন্টুর সামনে প্রবীরকে ফোন দিয়ে একই প্রশ্ন করলে সে বন্ধু হিসেবে প্রবীরকে অস্বীকার করে এবং তাকে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য মামুনকে বলে। তখন থেকেই স্বপন কুমার সাহা ও প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করে পিন্টু। মূলত স্বপন ও প্রবীরকে হত্যার জন্য পিন্টুকে প্ররোচনা দেয় মামুন নিজেই।

মামুনের আয়ের উৎসঃমামুনের ছোট ভাই মাহফুজের মাধ্যমে জানা যায় মামুন একসময় প্রিন্টিং এর ব্যবসা করতো। পাঁচ বছর আগে ব্যবসায় লোকসানের মুখে পরে ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে মামুন কি ভাবে টাকা আয় করে তা বলতে পারেননি মাহফুজ।

কিন্তু এলাকাবাসী ও স্বর্ণপট্টির স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই মামুন পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স দাবি করে মার্কেটের বিভিন্ন দোকান থেকে আর্থিক সুবিধা নিতো। এছাড়াও ব্যবসার উন্নতি ও শত্রুর হাত থেকে ব্যবসা বাঁচাতে ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিতো মামুন। একইভাবে স্বপন ও প্রবীরের বিরুদ্ধে পিন্টুকে বিষিয়ে তুলে টাকা নেয় মামুন। এবং বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা বলে হত্যার উষ্কানি দিতো মামুন।

এলাকাবাসী ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মতে মামুনঃ এলাকাবাসী ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মতে ব্যবসায় বন্ধ হবার পর থেকেই নানান সময়ে ব্যবসায়ীদের বিরক্ত করতো মামুন। নানান হুমকি-ধামকি ও ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতো।

বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: নারায়ণগঞ্জের খবর

Leave A Reply

Your email address will not be published.