বিষেরবাঁশী ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম উদ্দিন হত্যা মামলার রায়ে ৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত লাশ গুম করার অভিযোগে প্রত্যেক আসামীকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড দেন। মামলায় অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় ৩ আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন এই রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এই রায় প্রদান দেন। রায় প্রদানকালে ৭ আসামীদের মধ্যে ৩ আসামী উপস্থিত ছিল এবং ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক রয়েছে।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- সাদেকুর রহমান, মো: ইকবাল হোসেন, সোহাগ এবং বাবু কাজী। বেকসুর খালাস প্রাপ্তরা হলেন- মোক্তার হোসেন, মো: মেহেদী ও আবুল হোসেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ফতুল্লার কাশিপুর দেওয়ানবাড়ী এলাকার হাজী আফসার উদ্দিনের ছেলে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী হালিম উদ্দিন কয়লা ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাঁচ লাখ টাকা দেয় তার বন্ধু একই এলাকার ইকবালকে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত ইকবাল হালিমের টাকা নিজ ব্যবসায় খাটিয়েও কোন লভ্যাংশ না দেয়ায় হালিম কয়েক দফায় তার টাকা ফেরত চায়। ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট ইকবাল টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে হালিমকে তার বাসায় এসে দেখা করতে বলে। হালিম ওইদিন তার স্ত্রীকে টাকা আনতে যাওয়ার কথা বলে ইকবালের বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এদিকে হালিম ইকবালে বাড়িতে গেলে পূর্ব থেকেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ছয় সাতজন বন্ধু সহ বাসায় অবস্থান নেয় ইকবাল। হালিম তার বাসায় উপস্থিত হলে ইকবাল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে হালিম গুরুতর আহত হলে তাকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ পাঁচ টুকরো করে বস্তায় ভরে একটি ডোবায় ফেলে দিয়ে আসে। ঘটনার এর একদিন পর ১৭ আগস্ট ডোবা থেকে হাত-পা বিহীন বস্তাবন্দী অবস্থায় হালিম উদ্দিনের পাঁচ টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত হালিম উদ্দিনের ছোট ভাই শামীম বাদী হয়ে প্রথমে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামী সাদেকুর রহমান হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে ইকবালসহ হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে সে জানায়, পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে বন্ধু ইকবাল হোসেন তার বাসায় ডেকে নিয়ে হালিম উদ্দিনকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাতের পর গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ ৫ টুকরো করে সদর উপজেলার কাশিপুর এলাকায় ডোবায় ফেলে দেয় আসামীরা। এই ঘটনার তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ ৭ জনকে আসামী এবং ২৫ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
তবে এই রায়ে ন্যায়বিচার পাননি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত হালিমের পরিবার। নিহত হালিম উদ্দিনের বাবা আফসার উদ্দিন রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে বলেন, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া আসামী যদি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে এই দেশে আমরা কিভাবে ন্যায়বিচার আশা করব? আংশিক বিচার পেয়েছেন দাবী করে তিনি জানান, ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে শীঘ্রই আপীল করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি জেলা আদালতের পাবলিত প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, সুষ্ঠু রায়ের ব্যাপারে আমি সর্বাত্বক চেষ্টা করেছিলাম। যার ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি হক্যা মামলার রায় প্রদানে সম্ভব হয়েছে। তিন আসামী বেকসুর খালাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাক্ষীরা যথাযথভাবে তাদের অপরাধ প্রমান করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিন আসামী খালাস পেয়ে গেছে। তবে মামলার বাদিপক্ষ অসন্তুষ্ট হলে এবং তারা চাইলে এই তিন আসামীকে পুনরায় উচ্চ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যাপারে আমি সর্বাত্বক সহযোগিতা করবো।
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়