শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

জুজুর ভয়ে’ কেন্দ্রে অবস্থান নেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা

বিশেরবাঁশী ডেস্ক: ‘জুুজুর ভয়ে’ গাজীপুর সিটিতে ভোটের দিন ও ভোটের আগে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে মাঠে ও কেন্দ্রে অবস্থান করেননি দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ফলে জয়টা সহজ করে ঘরে তুলে নিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির ঘরে থাকা মেয়র পদটি হাত ছাড়া হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা কারণে গত ১০ বছর যাবত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আধিপত্য বিস্তারের ফলে দিকভ্রান্ত হয়ে যান বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাকর্মীসহ স্থানীয় প্রভাব বিস্তারকারী নেতাকর্মীরা। এ জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। প্রার্থী দিতেও ভুল করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। মঙ্গলবার নির্বাচনের পর রাতে ও গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের একাধিক বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএনপির অনেক নেতাই গণমাধ্যমকে গাজীপুর বিএনপির পেক্ষাপট জানালেও প্রকাশ্যে নাম উল্লেখ করতে রাজি হন না। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, এবার বিএনপিকে জনগণ ভোট দেয়নি, কারণ কি জানতে চাওয়া হলে, নগর আওয়ামী লীগের ফরিদ আলম নামের এক নেতা বলেন, গাজীপুরের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের মেয়র ছাড়া উপায় নেই। সে জন্য জনগণ বেছে নিয়েছে জাহাঙ্গীর আলমকে। তাই ভোটের দিন ভোটাররা সেই কথা রেখেছে। বিএনপিপন্থি স্থানীয় প্রভাবশালী সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা হাসান উদ্দিন সরকারকে মেয়র বানানোর জন্য আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু কেন্দ্র ও মাঠে বিএনপির নেতাকর্মী না থাকায় ভোটের দিন এককভাবে মাঠ দখলে চলে যায় আওয়ামী লীগের। তিনি বলেন, এ ছাড়া নানা কারণও থাকতে পারে।

এদিকে দলটির স্থানীয়রা নেতাকর্মীরা জানান, গাজীপুর সিটিতে যেসব কারণে হাসান সরকারকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত করেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোটের আগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয় আওয়ামী লীগ পক্ষে। সেই গুজবগুলো বিএনপির সহজ-সরল দুর্বল ও হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করে। গুজবগুলো বেশিরভাগই বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তারা।

গুজবগুলো হলো- খুলনার নির্বাচনের নেতিবাচক প্রভাব, পুলিশের ধরপাকড়-হুমকি, ত্রাস সৃষ্টি, প্রশাসনযন্ত্র ও পেশীশক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, সরকারদলীয় প্রার্থী ও তার পক্ষে নির্বাচনী আচরণ বিধির বেপরোয়া লঙ্ঘন ও নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার ভূমিকা, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সুবিধার অপব্যবহার করে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী কৌশল জেনে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া এজেন্ট নির্বাচনে ভুল ও পর্যাপ্ত কেন্দ্র খরচ দিতে ধানের শীষ প্রার্থীর অপারগতা, ধানের শীষের এজেন্ট তালিকায় নৌকার প্রার্থীর প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের ঢুকে পড়া, অনেক এজেন্টকে কেন্দ্রে আসলে জীবন নাশ এমনকি ভোটের পর মাদকে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দিয়ে এলাকাছাড়া করা। এসব বিষয়ে গুরুত্ব নিয়ে ভোটের মাঠে অবস্থান নেননি গাজীপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে ভোটের দিন বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীর কেন্দ্রে কেন্দ্রে মহড়া ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, খুলনার নির্বাচনের পর নেক্সট মেয়র ধরে নিয়ে বিএনপির অনেক নেতার জাহাঙ্গীর কানেকশন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে এবং উন্নয়নের চাবি জাহাঙ্গীরের হাতে- এমন আবহ সৃষ্টি, গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামী সংসদ নির্বাচনসহ জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবের বিষয়টি সরকারবিরোধী ভোটারদের সামনে কার্যকরভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন হাসান উদ্দিন সরকার। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীর নয়, উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করার আওয়াজের বিপরীতে হাসান সরকার নয় ধানের শীষ বা খালেদা জিয়াকে বিজয়ী করে দুঃশাসনের জবাব দেয়ার ডাক সেভাবে উচ্চারিত হয়নি গাজীপুর সিটিতে।

এ প্রসঙ্গ বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে গতকাল পোস্ট করে বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মির্জা ফখরুলের ভোটের মাঠে নামতে কী অসুবিধা ছিল তা স্পষ্ট হয়নি, হাসান সরকার জিতলেও মান্নানের মতো জেলে ও কোর্টে ঘুরতে হবে, এমন প্রচারণা জোরদার হওয়া, তরুণ প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় জাহাঙ্গীর আলমের অনেক বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছানোর বিপরীতে হাসান সরকারের বয়স ও অসুস্থতাজনিত সীমাবদ্ধতা ভোটের মাঠে জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার কারণে দলটির পরাজয়ের অনেক কারণের মধ্যে এটিও একটি।

এদিকে নির্বাচনে হারার কারণগুলোর মধ্যে আরো হচ্ছে বিএনপির সাংগঠনিক ভঙ্গুর অবস্থা এবং দুই দশক ধরে ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠন না করা, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অঢেল অর্থবিত্ত ও দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার বিপরীতে বিএনপি প্রার্থীর চরম আর্থিক সংকট ও দলীয় সহযোগিতা না পাওয়া। এ প্রসঙ্গ বিএনপিপন্থি এ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক বলেন, নির্বাচন পরিচালনাগত অদক্ষতা ও দুর্বল মনিটরিং, গতবারের নির্বাচনে প্রধান সমন্বক ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহর অতুলনীয় দক্ষতা, নিষ্ঠা ও শ্রমের সুফলের বিপরীতে এবারে অগোছালো ও দায়সারা তৎপরতা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ।

বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: রাজনীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.