শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

“চাঁদপুরে অধ্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে স্বামী ও সতীন আটক”

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: চাঁদপুরে কলেজ অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী মহিলা লীগের সদস্য শাহীন সুলতানা ফেন্সি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্বামী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. জহিরুল ইসলাম এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখাকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার জহিরুল ইসলাম এবং মঙ্গলবার সকালে জুলেখাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অলি উল্লা।

নিহতের ভাই ষোলঘর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নঈম জানান, এ ঘটনায় দু’ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, ফেন্সিকে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার ধারণা-তাকে ইফতারের আগেই হত্যা করা হয়েছে। কারণ, তার হাতে ব্যাগ এবং পায়ে মোজা ছিল। এ থেকে ধারণা করছি, সে বাসায় আসার পরপরই তাকে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করা হয়। এতে তার মাথার মগজ বেরিয়ে যায়। তিনি জানান, হত্যার পর তার স্বামী জহিরুল ইসলাম দোকানে গিয়ে বেশ কয়েকটি সিগারেট পান করেন।

নিহত ফেন্সি
এর আগে ৪ জুন সোমবার রাত ১২টার দিকে শহরের ষোলঘর পাকা মসজিদ এলাকায় এসপি অফিসের সামনের নিজ বাসা থেকে অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সির (৫০) রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আবু নঈমের অভিযোগ, ফেন্সিকে তার স্বামী জহিরুল ইসলাম হত্যা করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, জহিরুল কয়েক বছর আগে আরেকটি বিয়ে করেন। সেটি নিয়ে পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।

নিহতের আরেক ভাই ফোরকান বলেন, এ হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। তিনিও জানান, দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলা ছিল। সে কারণেই তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জহিরুল ইসলাম রাত ১১টার দিকে আমাদের খবর দেন। আমরা গিয়ে দেখি বোনের রক্তাক্ত দেহ কক্ষের মেঝেতে পড়ে আছে।

নিহত ফেন্সির মেয়ে চিকিৎসক পুষ্পও তার মায়ের হত্যার জন্য বাবাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আমার মাকে বাবা ও ওই মহিলা (দ্বিতীয় স্ত্রী) মিলে অনেক হুমকি দিয়েছে আগে-পরে।

তবে অ্যাড. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি বাসায় ছিলাম না। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি। বাসায় এসে দেখি রুমের দরজা খোলা। মেঝেতে তার দেহ পড়ে আছে। পরে আমার চিৎকারে লোকজন ছুটে আসে।

স্বজনরা জানান, নিহত ফেন্সি প্রায় ২৮ বছর ধরে বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি গল্লাক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। জহিরুল-ফেন্সির দাম্পত্য জীবন তিন দশকেরও বেশি সময়ের। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে দু’জন দেশের বাইরে থাকেন। আরেকজন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে পড়ছেন।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অলি উল্লা বলেন, নিহতের মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সম্ভবত একটি প্রচণ্ড আঘাতেই তিনি মারা যান। তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি তার স্বামী বাসায় রয়েছেন।

ওসি জানান, শাহীন সুলতানা ফেন্সির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া অ্যাড.জহির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। মামলা হলেই তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেছেন, ফেন্সির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসক তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যেই স্বামী জহিরুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.