শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে দুর্বৃত্তরা ঢুকে পড়ছে রাজধানীতে!

বিশেরবাঁশী ডেস্ক: ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে মৌসুমি ভিক্ষুকরা। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে এসব মৌসুমি ভিক্ষুকদের আড়ালে কিছু মৌসুমি দুর্বৃত্তও ঢুকে পড়ছে জনবহুল এই ঢাকা শহরে। যারা ছিচকে চুরির মতো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি ছিনতাই, অজ্ঞান বা মলম পার্টির সোর্স হিসেবে কাজ করে। রোজার কয়েকদিন আগে থেকেই রাজধানীতে আসতে শুরু করে মৌসুমি ভিক্ষুকরা। তবে ১৫ রোজার পর থেকে বাড়তে থাকে এই সে াত।

কত সংখ্যক ভিক্ষুক ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আসে এর কোনো হালনাগাদ পরিসংখ্যান নেই। তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে সারাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা ৭ লাখ। ঢাকায় ভিক্ষুক রয়েছে এক লাখেরও বেশি। যা দুই ঈদে বৃদ্ধি পায় কয়েকগুন। ভিক্ষুকদের ভিড়ে বিপনীবিতানগুলোর সামনে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। রাজধানীর ৭৮টি সিগন্যাল পয়েন্টসহ তিন শতাধিক স্থানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে এসব ভিক্ষুক।

রাজধানীতে ভিক্ষুকদের নিয়ে আছে বিভিন্ন সংগঠন। মূলত ভিক্ষুকদের দিয়ে ব্যবসা করাই অধিকাংশ সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ। অন্ধ কল্যাণ সংস্থা, দুস্থ কল্যাণ সংস্থা, অন্ধ সংস্থা, পংগু সমাজকল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন নামে চলে ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষাবৃত্তির ছদ্মবেশে অপরাধী গ্রুপের হয়ে কিছু ভিক্ষুক কাজ করে যাচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমি দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় রাজধানীতে। কেননা এই সময় বড় অঙ্কের অর্থ লেন-দেন হয় সর্বত্র। নানান ছদ্মাবরণে কিছু দুর্বৃত্ত আড়াল নেয় ভিক্ষুকের। এদের মধ্যে কেউ চুরির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও অনেকে বড় অপরাধী চক্রের সহায়তাকারী হিসেবেও কাজ করে বলে অভিযোগ আছে। তাই এবার ভিক্ষুকদের দিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে সূত্র জানায়।

বহুল আলোচিত সার্জেন্ট আহাদ পারভেজ হত্যার অন্যতম আসামি কাঙ্গালি জাকির ছিলেন ‘পঙ্গু সমাজকল্যাণ সমিতির’ সদস্য। কাঙ্গালি জাকিরের নেতৃত্বে ২০০০ সালের ২৮ অক্টোবর বঙ্গভবনের পাশের পার্কের সামনের রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় সার্জেন্ট আহাদ পারভেজ ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা আহাদকে ছুরি মেরে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে ২০১৪ সালে খিলগাঁওয়ে এক বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় এই কাঙ্গালি জাকির।

এদিকে ভিক্ষুকদের কোনোভাবেই নিবৃত করা যায়নি ভিক্ষাবৃত্তি থেকে। সরকার একাধিকবার এদেরকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। কয়েক বছর আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ১০টি এনজিওর সহযোগিতায় ভিক্ষুকদের নিয়ে একটি জরিপ চালায়। ওই জরিপে ভিক্ষুকদের ৫টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মৌসুমি, রেগুলার, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশু ভিক্ষুক।

আর ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ২০১১ সালে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৬ মাসের মাথায় এই প্রকল্পের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ভিক্ষুকের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬৬ জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের তারা ধরে রাখতে পারেনি। এদিকে ২০১৪ সালের ২২ জুলাই রাজধানীর ৭ এলাকায় ভিক্ষুক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সরকার। ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষিত স্থানগুলো হলো- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, সোনারগাঁও হোটেল, রূপসী বাংলা হোটেল, বেইলি রোড, সংসদ ভবন এবং গুলশান, বারিধারা ও বনানীর কূটনৈতিক এলাকা। যদিও এখনো ওই এলাকাগুলোতে ভিক্ষুকদের দেখা যায়।

বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.