শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

‘লাভের বেলায় ষোল আনা লোকসান দেখলেই তালবাহানা’

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: ২০১৭ সালে সরকারের বোরো চাল কেনার ঘোষণায় লোকসানের অজুহাত তুলে বগুড়ার সিংহভাগ লাইসেন্সধারী মিলার তখন সরকারকে চাল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। দফায় দফায় দেনদরবার করেও তাদের চুক্তির আওতায় আনা যায়নি। এতে সরকারিভাবে জেলায় চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা।

অবশেষে সরকার সেসব লাইসেন্সধারী মিলারদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী চুক্তি না করায় টানা পরপর চার মৌসুম জেলার লাইসেন্সধারী ওইসব মিলার সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাবেন না। তাদের কাছ থেকে সরকার কোনো ধরনের পণ্য কিনবেন না মর্মে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়।

চাল নিয়ে চালাচালির পর দুই মৌসুম পার হতে না হতেই অজ্ঞাত কারণে তাদের সেই শাস্তি মওকুফ! কেননা চলতি বোরো মৌসুমে সরকারকে চাল দিতে এসব মিলাররাও চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বা হচ্ছেন। লাইসেন্সের ধরন অনুযায়ী বরাদ্দের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছেন তারা। এরমধ্যে সেই বড় মাপের ৩৪টি অটোমেটিক চালকল মালিকরাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন একাধিক মিলার। তাদের ভাষায়, ‘লাভের বেলায় ষোল আনা লোকসান দেখলেই যত তালবাহানা’। তবে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের কেউই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ জেলার ১২টি উপজেলায় সরকারিভাবে ৯২ হাজার ৫শ’ ৩১ মেট্রিকটন সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। প্রতিকেজি সেদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ টাকা ও আতপ চালের দাম ৩৭ টাকা।

জেলাটিতে লাইসেন্সধারী মিলার রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৯শ’ ৫৬ জন। ইতোমধ্যেই প্রায় ৮শ’ ৭৬ মিলার প্রায় ৪৮ হাজার মেট্রিকটন চাল দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের বোরো মৌসুম থেকে টানা চার মৌসুমের মধ্যে সরকারিভাবে চাল কেনা শেষ হয়েছে মাত্র দুই মৌসুম। শুরু হয়েছে তৃতীয় মৌসুমের চাল কেনার কার্যক্রম। ওই সময় প্রতিকেজি সেদ্ধ চালের দাম ৩৪ টাকা ও আতপ চালের দাম ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

ওই সময় লোকসানের অজুহাত তুলে জেলার ১ হাজার ৯শ’ ৩৫ জন লাইসেন্সধারী মিলারের মধ্যে মাত্র ৭শ’ ১৮ জন মিলার সরকারকে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী সেসব মিলাররা সরকারকে মোট ১৯ হাজার ৩শ’ ৬৩ মেট্রিকটন চাল দেয়। অথচ ওই মৌসুমে সরকার এ জেলা থেকে মোট ৬৮ হাজার ৮শ’ ৮ মেট্রিকটন চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছিলো।

মিলারদের অসহযোগিতার কারণে ওই মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পুরণে ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে জেলার ১ হাজার ২শ’ ১৭জন মিলারকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। এরমধ্যে জেলার ৩৫ জন বড় মাপের অটোমেটিক চালকল মালিকের মধ্যে ৩৪ জনই ছিলেন। চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় টানা চার মৌসুম জেলার লাইসেন্সধারী ওইসব মিলার সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাবেন না। তাদের কাছ থেকে সরকার কোনো ধরনের পণ্য না কেনার ঘোষণা দেয়।

অথচ দুই মৌসুম পার হতে না হতেই শাস্তির আওতায় থাকা লাইসেন্সধারী সেই মিলারদের শাস্তি মওকুফ হয়ে গেছে। বর্তমানে বোরো মৌসুমের চাল দিতে তারা সরকারকে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বা হচ্ছেন।

কয়েকজন লাইসেন্সধারী মিলার বলেন, যত আইন যত ক্ষমতা তুলনামূলক ছোটদের ওপর। ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকবেই। সেই চিন্তা থেকে নিজেদের লোকসান স্বীকার করে ওই সময় আমরা সরকারকে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। সে অনুযায়ী চালও দিয়েছি। বিনিময়ে যারা আইন মানলো না তারাই পার পেয়ে গেলো!

এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন জানান, সরকার ওইসব মিলারদের শাস্তি মওকুফ করে দিয়েছে। তাই চলতি বোরো মৌসুমে চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তারা।

বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হলে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে আশা ব্যক্ত করেন খাদ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.