শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

বিশেরবাঁশী ডেস্ক: স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্কুলটিকে বানানো হয়েছে টর্চার সেল। চোরাই গাড়ি আর মোটরসাইকেল রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির খেলার মাঠকে। প্রতিবাদ করায় প্রতিনিয়ত মারধর করা হচ্ছে শিক্ষকদের। এসব ঘটনায় থানায় মামলা করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। স্কুলে খোদ ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে হত্যার হুমকি।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শেখ ফরিদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা শিমুল, দেওয়ান আলীমউদ্দিন শিশির ও মাসুদ রানাসহ তার সহযোগীরা সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত করে রেখেছে। তারা শিক্ষকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিদ্যালয়ের মাঠ ও ক্লাসরুমগুলো টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা কোনো কথা বলতে পারেন না। ২২ এপ্রিল দুপুরে শিমুলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী বিদ্যালয়ে আসে। তারা অফিস রুমে প্রবেশ করে কোনো কথা না বলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও রুহুল আমিনকে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অধ্যক্ষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চোখের সামনে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার শিক্ষকদের বেধড়ক পিটিয়ে গেল, আমি কিছুই করতে পারলাম না। প্রতিনিয়ত আমার শিক্ষকরা ভয় নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। না জানি আজকে কে লাঞ্ছিত হবেন। শিক্ষকরা বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের কিন্তু সেখানে কর্তৃপক্ষের কোনো কর্তৃত্ব নেই। সন্ত্রাসীরা পুরো বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে রেখে আলাদা কন্ট্রোল রুমে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্লাস শেষে ফেরার সময় তাদের মনমতো রুম খুলে রাখতে হয়। সন্ধ্যার পর নারী ও মাদকসহ বাইরের লোকদের নিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে তারা। এ ছাড়া চোরাই গাড়ি, মোটরসাইকেল রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যালয়ের মাঠ। আর কাউকে অপহরণ করলে তাকে রাখা হচ্ছে ক্লাসরুমে।

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সি কামরুজ্জামান কাজল জানান, এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় ২৩ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা তাকে বলে, আপনি যদি শিক্ষকদের উসকানি দেন তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে মেরে ফেলা হবে। এ ব্যাপারে কাজল রমনা থানায় একটি জিডি করেন। কাজল বলেন, সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সইতে সইতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের নিয়ে বের হয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মইনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে দেওয়ান আলীম উদ্দিন শিশিরের সঙ্গে গতকাল বুধবার তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিনা সেটিও তিনি জানেন না।

বিশেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.