বৃহস্পতিবার ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

মিয়ানমারে আটক সাংবাদিক: বিশ্বাসঘাতকতা করিনি, সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: বুধবার মিয়ানমারে বিচারাধীন রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন, সরকারি নথি গোপনে হস্তগত করার যে অভিযোগ ওই দুই সাংবাদিকদ্বয়ের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তার সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। তাছাড়া পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সাংবাদিকদ্বয়ের মুক্তি পাওয়া উচিত। শুনানি শেষে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের হয়ে কাজ করা মিয়ানমারের ওই দুই সাংবাদিক বলেছেন, তারা তাদের দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তারা সাংবাদিক হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। ১০ রোহিঙ্গাকে গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনা বিশ্ববাসীর নজরে আনার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি নথি গোপনে হস্তগত করার অভিযোগ এনেছে পুলিশ।

আটক সাংবাদিকদ্বয়কে অভিযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইয়াঙ্গুনের একটি আদালতে গত জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক শুনানি শুরু হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী ওয়া লোন এবং ২৮ বছর বয়সী কিয়াও সোয়ি উয়ের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আমলের শত বছরের পুরাতন আইনে বিচার চলছে। ওই আইনে সরকারি তথ্য চুরির অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।

বুধবারের শুনানিতে বিচারক ইয়ে লুইনের আদালতে সাংবাদিকদের পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, সরকারি নথি গোপনে হস্তগত করার অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারা, সাক্ষীদের দেওয়া সাক্ষ্যে গড়মিল থাকা, গ্রেফতার ও তল্লাসির ক্ষেত্রে যথাযথ বিধি না মানার মতো ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ নেই। তাই তাদের যেন মুক্তি দেওয়া হয়। আদালত বুধবারের মতো শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১১ এপ্রিল। শুনানি শেষে বিবাদী আইনজীবী খিন মং জা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পরীক্ষার পর এ পর্যায়ে এটা বলা যতে পারে, তাদের সাক্ষ্যে তেমন কোনও কিছুই পাওয়া যায়নি। সুতরাং ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন না করে তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত।

শুনানি শেষে আটক সাংবাদিক ওয়া লোন বলেছেন, ‘আমি শুধু সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি চাই সাধারণ মানুষ সেটা বুঝুক। আমি তাদের জানাতে চাই, আমি আমার দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।’ আটক অপর সাংবাদিক কিয়াও সোয়ি উ বলেছেন, সংবাদমাধ্যম মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য খুব জরুরি। ‘আমরা সংবাদের সূত্র ধরে অগ্রসর হয়েছি এবং ইন ডিনের ঘটনাটির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। দেশকে গুরুত্বপূর্ণ ওই ঘটনার তথ্য জানাতেই আমরা ওই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম।’ শুনানি শুরুর আগে ডেনমার্ক দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শুনানি থেকে যা জানা গেছে তা থেকে এটি স্পষ্ট, মামলাটি খুব দুর্বল। পুলিশের হাজির করা সাক্ষীদের দেওয়া সাক্ষ্যেও গড়মিল রয়েছে। পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের প্রক্রিয়াগত ত্রুটিও স্পষ্ট।’

রয়টার্সের আটক সাংবাদিকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন,অপরিচিত পুলিশ সদস্যের আমন্ত্রণে তারা একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে কিছু মোড়ানো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গ্রফতার করা হয় তাদের। গত বছরের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ১০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করছিলেন আটক সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ি উ। সাংবাদিকদ্বয়ের গ্রেফতারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মিয়ানমার স্বীকার করতে বাধ্য হয়,সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যার ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। সূত্রে: রয়টার্স।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/মিতু

Categories: পরবাস

Leave A Reply

Your email address will not be published.