শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

গোয়ালন্দে ট্রাক ওয়েট-স্কেলের ওজন কার্যক্রম বন্ধ, কমছে রাজস্ব আয়

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা কোর্ট চত্বর এলাকায় স্থাপিত বিআইডব্লিউটিসি’র অধিনস্থ ডিজিটাল রোড ভেহিক্যালস্ ওয়ে ব্রিজ স্কেল (দৌলতদিয়া ওজন স্কেল) এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত ৩দিন ধরে ওই স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হাতে লিখে দেওয়া হচ্ছে ট্রাক চালকদের ট্রাকের ওজন স্লিপ। এই স্কেল থেকে সরকারের প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আয় হলেও সময় মতো কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাব ও পরিকল্পনাবিহীন মেরামতে স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে করে দিন দিন কমে যাচ্ছে সরকারের রাজস্ব আয়।

অপরদিকে ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক গোয়ালন্দ উপজেলা কোর্ট চত্বর দৌলতদিয়া ওজন স্কেলে ট্রাক ওজন করেই পদ্মা নদী পারাপার হয়ে থাকে। এ রুটে চলাচলরত ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার ভ্যানসহ মালবাহী ছোট-বড় পিকাপ ভ্যান নির্দিষ্ট ওজন নিয়ে ফেরীতে উঠার জন্যই স্থাপিত হয় ওজন স্কেলটি।

বিআইডব্লিউটিসি’র অধিনস্থ দৌলতদিয়া ওজন স্কেলের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই দুপুর হতে স্কেলটি একেবারেই বিকল হয়ে পড়েছে। ওই দিন থেকেই হাতে লিখে ট্রাকের ওজন স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। আরও জানা গেছে, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির পূর্বে এই স্কেল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন করা হতো। বর্তমান নদীতে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের লম্বা লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহনের চাপ আগের তুলনায় কম হয়েও যানজট দেখা দেয়।

সোমবার সকালে স্কেল পরিদর্শনকালীন দেখা গেছে, ডিজিটাল রোড ভেহিক্যালস্ ওয়ে ব্রিজ স্কেলটির (দৌলতদিয়া ওজন স্কেল) বেহাল অবস্থা। স্কেলটির গার্ডার, চেকার প্লেটে মরিচা ধরে ও ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। যা পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন নিতে সক্ষম নয়। গত জুন মাস থেকেই স্কেলটির চেকার প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ায় ট্রাক চালকরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ওজন করেছে। স্কেলটির দুই পাশে কালো কালো ধারালো ঝামা ইট ফেলে গর্ত ভরাট করে হয়েছে এ্যাপ্রোজ সড়ক। এ্যাপ্রোজ সড়কে পিচ ঢালাই না দিয়ে ভাঙ্গা ইটের দৌলতে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের।

এদিকে, ট্রাক চালকরা ভয়ের ভেতর আছেন। তারা বলেণ, স্কেলে মালভর্তি ট্রাক উঠার পর স্কেলের গার্ডার ও প্লেট কখন যে ভেঙ্গে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আবার স্কেলে উঠা ও নামার সময় কখন যেন ট্রাকের চাকা ফেটে যায়। এতে করে ঢাকা অভিমুখী ট্রাক চালকরা অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন। নানা ভোগান্তি ও স্কেলের বেহাল দশার অবসান চায় ট্রাক চালকরা।

স্কেলটি স্থাপনে সরকারের যেভাবে রাজস্ব আয় হয় ঠিক সে ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নজরদারী নাই। স্কেলের উপরে চেকার প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ায় ট্রাক চালকরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি পার করেন। মাঝে মাঝে গার্ডার, চেকার প্লেট পাল্টানোর নামে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়। অথচ দীর্ঘ মেয়াদী কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। স্কেল স্থাপনের পর থেকে আজও স্কেলের দুই পাশে এ্যাপ্রোজ সড়ক মেরামতের নামে সঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি।

এ ব্যাপারে দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসি’র ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, বছরের বিভিন্ন সময় স্কেলটি বিকল হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। আশা করি, স্কেলটি পুনরায় মেরামত বা পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় স্থাপিত ট্রাক ওজন স্কেলের ন্যায় নতুন করে স্থাপন করার পরিকল্পনা চলছে। চলতি মাসের মধ্যে নতুন স্কেল স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে।

জানা গেছে, প্রায় ৪ বছর আগে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেলাল এন্ড ব্রাদার্স কোম্পানি স্কেলটি স্থাপন করে। ওই স্থাপনের সময়ই স্কেলটির দুই পাশে কাঁচা মাটির ওপর নাম মাত্র কার্পেটিং করে। তৎকালীন সময় ৩মাস যেতে না যেতেই কার্পেটিং উঠে স্কেলের দুইপাশে কাদামাটির রাস্তায় পরিণত হয়। সে থেকেই ভাঙ্গা ইট বালু ফেলতে ফেলতে বর্তমানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের অনেকেই ধারণা করছে, নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের ফলেই বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.