শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

ফেঁসে যাচ্ছেন ট্রাম্প?

  • অনলাইন ডেস্ক

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকেই একটি বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বারবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে; এর কারণ মার্কিন নির্বাচনে তার পক্ষে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ। বারবার দৃঢ়তার সঙ্গে ওই অভিযোগকে ট্রাম্প উড়িয়ে দিলেও এবার মনেহচ্ছে কিছুটা হলেও ফেঁসে গেছেন তিনি।

রুশ আইনজীবীর সাথে বৈঠকের কথা স্বীকার করে ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার জন্য বলতে গেলে দুর্দশা ডেকে এনেছেন। ট্রাম্প পুত্র বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাস্ত করার মতো তথ্য পাওয়ার আশায় ওই বৈঠকটি হয়েছিল। তবে সে বৈঠকে তেমন কোন তথ্য পাননি বলেও দাবি করেন ট্রাম্প জুনিয়র।

সম্প্রতি জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনের শুরুতেই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পোর বৈঠক হয়। বহুল কাঙ্ক্ষিত ওই বৈঠকের অন্যতম বিষয় ছিল বিগত মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি। যা সরাসরি উড়িয়ে দেন পুতিন।

নির্বাচত হওয়ার পর থেকেই হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারাভিযান ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছে রাশিয়া- এমন অভিযোগ উঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তবে এমন কোন বিষয়ে অবগত নন বলে দাবি করে আসছেন ট্রাম্প। একইভাবে রাশিয়াও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছিল।
ট্রাম্প জুনিয়রের স্বীকারোক্তি
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র স্বীকার করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই হিলারি ক্লিনটনের অবস্থানকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো তথ্য পাওয়ার আশায় ক্রেমলিনের সঙ্গে যুক্ত এক রুশ আইনজীবীর সঙ্গে গত বছর দেখা করেছিলেন।

তবে এমন তথ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও ন্যাটালিয়া ভেসেলনিটস্কায়া নামের ওই আইনজীবী শেষ পর্যন্ত হিলারি সম্পর্কে কোনো কাজের তথ্যই দিতে পারেননি বলেও দাবি ট্রাম্প জুনিয়রের।

রুশ আইনজীবীর সঙ্গে ওই বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং ট্রাম্প শিবিরের নির্বাচনী প্রচারণা প্রধান পল জে ম্যানাফোর্টও ছিলেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

 

ইমেইল প্রকাশ
হিলারির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার কথা বলে পাঠানো কয়েকটি ইমেইল এবং তার প্রত্যুত্তরে দেয়া নিজের ইমেইলও বুধবার প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প পুত্র। সেখানে দেখা যায় ব্রিটিশ সঙ্গীত প্রকাশক রব গোল্ডস্টোনের মাধ্যমে ইমেইল পান ট্রাম্প জুনিয়র। যেখানে রাশিয়ার পক্ষ থেকে হিলারি ক্লিনটনের ক্ষতি করতে পারে এমন নথি দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল।
গোল্ডস্টোনের একটি ইমেইলে অত্যন্ত উঁচু স্তরের এবং স্পর্শকাতর তথ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। তা রাশিয়া এবং দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে সমর্থনের পরিচায়ক বলেও উল্লেখ করা হয়। যার উত্তরে ট্রাম্প পুত্র বলেন, যদি এমনই হয়, তবে আমি তা পছন্দ করবো।

সেই মেইলের এমন জবাব দেওয়ার পক্ষে ট্রাম্প পুত্র বলেন, কেউ আমাকে একটা ইমেইল পাঠিয়েছিল। আমাকে কেউ কিছু পাঠালে সে বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। আমি তা পড়ি, সে অনুযায়ী জবাব দেই। এবং সেখানে যদি আগ্রহোদ্দীপক কিছু থাকে, আমি মনে করি তেমন জবাবই সাধারণ বিষয়।

রাশিয়ার ব্যবসায়ী অ্যারাস আগালারোভ এবং তার পুত্র এমিন ট্রাম্প পুত্রের সাথে রুশ আইনজীবীর ওই বৈঠকটির আয়োজন করে দেয়। এমিন একজন পপ স্টার; যিনি গোল্ডস্টোনের মাধ্যেমে একটি সময় ঠিক করে নেন।

 

বৈঠকের কথা জানতেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাশিয়ার সঙ্গে ছেলের বৈঠকের কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন না বলে ট্রাম্প জুনিয়র নিজেই দাবি করেন। ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, রাশিয়ার এক আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠকের কথা তিনি তার বাবাকে বলেননি। কেননা ঘটনাটি আসলে বলার মতো তেমন কিছু না।

রুশ আইনজীবীর সাথে বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প পুত্র বলেন, আমি জ্যারেড এবং পলকেও আমার সঙ্গে বৈঠকে থাকতে বলি, কিন্তু কী নিয়ে বৈঠক তা আগে জানাইনি। কুশল বিনিময়ের পর ওই মহিলা বলেন, তার কাছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য আছে, যারা ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিকে অর্থায়ন এবং ক্লিনটনকে সমর্থন করছেন।

‘‘কিন্তু তার বক্তব্যগুলো ছিল অস্পষ্ট, দ্ব্যার্থবোধক এবং অর্থহীন। কথাগুলোকে সমর্থনের পক্ষে কোনো প্রমাণও দিতে পারেননি তিনি, দেয়ার চেষ্টাও করেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়, তার কাছে কাজের কোনো তথ্য নেই।’’ওই বৈঠকটিকে শুধুমাত্র ২০ মিনিট সময় ব্যয় উল্লেখ করে ট্রাম্প জুনিয়র বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ঘটনাটি লজ্জাজনক।

ট্রাম্প জুনিয়র জানান, ন্যাটালিয়া ভেসেলনিটস্কায়ার সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ৯ জুন নিউইয়র্কে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ারে। এর মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

‘উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি’
ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবৃতিতে তিনি ছেলেকে ‘একজন উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করেন এবং তার সততার প্রশংসা করেন।

 

অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি
এর আগে গোল্ডস্টোন মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ান সরকারের হস্তক্ষেপের কোন তথ্য তার কাছে নেই বলে দাবি করেন। ভেসেলনিটস্কায়া বলেন, ক্লিনটনের ক্ষতি করার মতো কোন তথ্য তার কাছে কখনই ছিল না এবং তার সাথে ক্রেমলিনেরও কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান। ব্যবসায়ী আগালারোভ এই অভিযোগকে কাল্পনিক বলে অভিহিত করেন।

সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, এই ইমেইলগুলো খুবই বিরক্তিকর। হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্রেট অ্যাডাম স্কিফ বলেন, তিনি প্যানেলের সামনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং সেই বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবার সাক্ষ্যগ্রহণ করতে চান।

রুশ হস্তক্ষেপ বা ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণা দলের কেউ কোন সাহায্য বা বিশেষ পরামর্শ পেয়েছিল তা তদন্ত করে দেখতে কয়েকটি কংগ্রেসনাল কমিটি কাজ করছে।

অনেকটা সময় ধরেই গত ৮ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি তদন্ত করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং কংগ্রেসের একটি কমিটি। এ অভিযোগের পক্ষে-বিপক্ষে বহু অভিমত এবং বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এবং এফবিআই প্রধান জেমস কোমির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও।

ওই বিষয়ে চলমান তদন্তে ট্রাম্প জামাতা কাশনার জড়িয়ে যাওয়ার মধ্যেই ট্রাম্প পুত্রের বিষয়ে এমন তথ্য আসায় নতুন এক দিক খুলে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বি.বা/ডেস্ক/ক্যানি

Categories: আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.