বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

এক টাকাও ব্যাংকঋণ নেয়নি সরকার

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: ব্যাংক থেকে পুরো অর্থবছরে কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে সে বিষয়ে বাজেটে উল্লেখ থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও ছিল। তবে তা কাগজে কলমেই থেকে গেল। অর্থবছর শেষ হলেও ব্যাংক থেকে এক টাকাও ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো বকেয়া পরিশোধ করেছে। মূলত, সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থের যোগান আসায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ব্যাংক ঋণের দিকে যায়নি সরকার। এ সময়ে আগের বকেয়া থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে করেছে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ আট হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১২ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। সাধারণত, বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ঋণের চাহিদা দু’ভাবে জোগান দেওয়া হয়। এক. বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুই. তফসিলি খাতের ব্যাংকগুলো।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছর শেষে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। এ সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ছয় হাজার ১১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকেও কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো পরিশোধ করেছে ১১ হাজার ৯১২ কোটি টাকার ঋণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের বাজেট ঘাটতির বড় অংশই জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জোগান হচ্ছে। ব্যাংকের আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে প্রায় দ্বিগুণ সুদ পাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। এতে সরকারকে আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে না। যদিও এ জন্য সরকারকে সুদ বাবদ দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে সরকারের উপর চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই (জুলাই- মে) সঞ্চয়পত্র বিক্রির আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৪৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের পুরো সময়ে নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৩ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে যা লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ অর্থ এসেছে বলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন।

সরকার ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নিলে সুদের হার হয় ২.৮৬ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিলে সুদ ৭ শতাংশের নিচে। দেখা গেছে, দেশে কার্যত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্থায়ী আমানত রাখলে গড়ে পাঁচ থেকে ৬ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও সব স্কিমের বিপরীতে এখনো ১১ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সঞ্চয়পত্রে একই সুদহার থাকলেও প্রতিনিয়ত কমছে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার। ফলে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে মানুষ। একইভাবে অন্যান্য জায়গা থেকেও বিনিয়োগ তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ লাভজনক হওয়ার পরও সেখানে অনেক ঝুঁকিও আছে। তাই অনেকেই সেখানে না গিয়ে ঝুঁকিহীন ও নিশ্চিত লাভের ক্ষেত্র সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর অর্থ পাচ্ছে সরকার। এতে ব্যাংক থেকে আর ঋণ না করলেও চলছে। এমনকি ব্যাংক ঋণও পরিশোধ করছে সরকার।

এদিকে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতা কমিতে চাচ্ছে সরকার। তা করতে ভবিষ্যতে সঞ্চয়পত্রে ক্রয়ের অর্থের উৎস জানানো বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা চলছে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: অর্থনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.