মঙ্গলবার ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ মঙ্গলবার

দেড় দশকে সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: গত দেড় দশকের সদ্যসমাপ্ত গেল অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত দেড় দশকে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২ বিলিয়ন ডলার কম রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশ থেকে তিন হাজার ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অথচ এ অর্থবছরের জন্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ছয় দশমিক ০৩ শতাংশ বা ২০০ কোটি ১৫ লাখ ডলার কম রফতানি হয়েছে।

একক মাস হিসেবে সর্বশেষ জুন মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে। জুন মাসে আয় হয়েছে ৩০৪ কোটি ডলার। গত বছরের জুন মাসে আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৫৯ কোটি ডলার। প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সার্বিকভাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের মন্দায় পোশাকের মূল্য কমে যাওয়ায় এ বছর রপ্তানি অর্ডার কম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এছাড়া ইউরো ও রোবলের দরপতনেরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রানা প্লাজা দূর্ঘটনার প্রভাব এজন্য দায়ী।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় তিন দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল চার দশমিক ১১ শতাংশ। আর এ গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১০-১১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নয় দশমিক ৭২ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, তার আগের অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল। এ দশবছরের আগের তিন বছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও ভাল ছিল। যার মধ্যে ২০০২-০৩ অর্থবছরে নয় দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। অবশ্য ২০০১-০২ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। ওই অর্থবছরে সাত দশমিক ৪৩ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল।

বিদায়ী অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরাবরের মত গেল অর্থবছরের রপ্তানিতেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে নিটওয়্যার ও ওভেন খাত। পোশাক খাতের রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। লক্ষ্যমাত্রা থেকে সাত দশমিক ৩৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতে আয় হয়েছে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। ওভেন খাতে এক হাজার ৪৩৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। নিটওয়্যার খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক এক শতাংশ। এর বাইরে রপ্তানি পণ্যে যেসব পণ্যের ভূমিকা বেশি থাকে সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় সার্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।

রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাক নির্ভর। রপ্তানিতে পোশাক খাত যত বেশি ভূমিকা রাখে ততই পুরো রপ্তানি খাতে তা পড়ে। অন্যদিকে পোশাক খাতে রপ্তানি খারাপ হলে একইভাবে তার নেতিবাচক প্রভাব রপ্তানি খাতে পড়ে। তিনি বলেন, রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও অনেক নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। পোশাকের পাশাপাশি অন্য পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রওিত মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ইত্তেফাককে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পোশাক খাতের রপ্তানির জন্য ইতিবাচক হয়েছে। তবে পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় নেতিবাচক। এজন্য তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: অর্থনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.