বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ফেসবুকে কুরুচিকর পোস্ট থেকেই তাণ্ডব শুরু

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: শুরুটা হয়েছিল রবিবার। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার এক তরুণের অত্যন্ত কুরুচিকর পোস্টই বসিরহাট মহকুমায় তাণ্ডবের মূল উৎস বলে মনে করছে প্রশাসন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফেসবুকে যদি কেউ কিছু বলে, তুমি তার পাল্টাটা বলো। তুমি কাউন্টার না করে রাস্তায় নেমেছ কেন?’’
দু’দিনে অন্তত ১৫টি পুলিশের গাড়ি-সহ বহু দোকানপাট ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। জখম এসপি ও এএসপি-সহ জনা ২০ পুলিশ কর্মী। এ ছাড়াও আহত আরও ৮ জন। ৪ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শৌভিক সরকার নামে বাদুড়িয়ার ওই তরুণ রবিবার রাতেই গ্রেফতার হয়। রাতেই বাদুড়িয়ার গ্রামে গিয়ে পুলিশ মাইকে আশ্বাস দেয়, অভিযুক্ত গ্রেফতার হবেই। রাত ৩টে নাগাদ পাটখেতে লুকিয়ে থাকা শৌভিককে ধরা হয়। কিন্তু ততক্ষণে বিষবৃক্ষের চারাটি পোঁতা হয়ে গিয়েছে। বাদুড়িয়া, বসিরহাট, স্বরূপনগর, হাড়োয়া, দেগঙ্গা, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ— উত্তেজনা ছড়াতে থাকে পোস্টটি নিয়ে। সোমবার বাদুড়িয়ার নানা জায়গায় পথ অবরোধ হয়। কিছু লোক আবার পাল্টা অবরোধ করে স্বরূপনগরে।সোমবার সন্ধ্যায় রটে যায়, শৌভিককে বাদুড়িয়া থানায় এনেছে পুলিশ। গুজবের বশেই থানা ঘিরে ফেলে কয়েক হাজার মানুষ। দাবি, অভিযুক্তকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েছিল। এলাকার ধর্মীয় নেতারা এসেও জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। লাভ হয়নি। উল্টে থানার সামনে পুলিশের তিনটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এর মধ্যে বসিরহাটের ত্রিমোহিণীতে কিছু দুষ্কৃতী দোকানপাট ভাঙতে শুরু করে। রাতে শৌভিকের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পাল্টা প্রতিরোধে নামে আর একদল। তারা ত্রিমোহিণী এলাকায় গাড়ির শো-রুম, দোকান, শপিং মলে ভাঙচুর চালায়। স্টেশন রোড, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়ার কিছু দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বসিরহাট চৌমাথার কাছে পুলিশের গাড়ি উল্টে ফেলা হয়। দা-তরোয়াল-কুড়ুল নিয়ে শহরের বুকে ঘুরতে দেখা যায় দু’পক্ষের দুষ্কৃতীদেরই। প্রায় সকলেরই গড় বয়স মেরেকেটে ২০-২২। পুলিশের দাবি, সীমান্তবর্তী এলাকার দুষ্কৃতীরাও সেই ভিড়ে মিশে ছিল। সকাল ১০টা নাগাদ বাদুড়িয়ার মলয়পুর থেকে ৪-৫ জনকে ধরে আনতে গিয়ে মার খায় পুলিশ। চোট লাগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ও আহত হন। দুষ্কৃতীরা রাস্তা কেটে আটকে দেয় পুলিশের গাড়ি। বোমা-গুলি পড়তে থাকে মুহূর্মুহূ। শেষমেশ পুলিশের হাত থেকে ধৃতদের ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
বসিরহাট ও বনগাঁর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানিয়েছেন, বাদুড়িয়া-সহ কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। বুধবার বন্ধ থাকবে এলাকার স্কুল-কলেজ ও অফিস।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: প্রবাস

Leave A Reply

Your email address will not be published.