শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

বাংলাদেশির সঙ্গে রুশ কন্যার বৈষ্ণবমতে বিবাহ সম্পাদন

বাংলাদেশে এসে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সুদূর রাশিয়ার এক তরুণী।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শেরপুরের গোপালবাড়ী মন্দিরে বাংলাদেশি ধর্মকান্ত সরকার (৩৭) ও রুশ কন্যা সিবেৎলানার (২৩) বিয়ে হয়।

গতকাল রাতে গোপালবাড়ী মন্দিরে বিয়ের আসরে বরের বেশে আসেন ধর্মকান্ত। একই সঙ্গে আসা কনে সিবেৎলানার হাতে ছিল শাখা, কপালে সিঁদুর আর চুমকির কাজ করা লাল-খয়েরি রঙের জর্জেট শাড়ি। ফুল আর উলুধ্বনির মাধ্যমে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়।

বিয়েতে পৌরহিত্য করেন ইসকনের প্রভু পরম করুণা গৌড়দাস। হিন্দু রীতি অনুযায়ী কন্যা সম্প্রদান করেন ইসকন, শেরপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব জগন্নাথ। এ সময় তিনি সনাতন ধর্মে দীক্ষিত রুশ কন্যা সিবেৎলানার নতুন নাম রাখেন ‘সুশ্রী দেবদাসী’। রাত পৌনে ১২টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। প্রায় পাঁচ শ নারী-পুরুষ ও শিশু এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। সিবেৎলানা বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। এ কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে ধর্মকান্ত তাঁর কথা বাংলায় অনুবাদ করে দেন।

ধর্মকান্ত সরকার প্রয়াত ধীরেন্দ্র চন্দ্র সরকারের ছোট ছেলে। ১৯৯৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর বড় ভাই চিকিৎসক ধীমান কুমার বর্মণের সঙ্গে তিনি রাশিয়ায় যান। সেখানে তেল, গ্যাস ও পেট্রল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে হোটেল ব্যবসা করেন। ২০১৩ সালে মস্কোতে অবস্থিত ও ইসকন প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মন্দিরের গুরুদেব আনন্তাকৃষ্ণা মহারাজের মাধ্যমে সিবেৎলানার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।

বিয়ের আচার পালন করছেন ধর্মকান্ত সরকার ও রুশ কন্যা সিবেৎলানা। 

রায়ধর্মকান্তের ভাষ্য, সিবেৎলানা মস্কোর বাসিন্দা। বাবা মারা গেছেন। মা ভালেনতিনা, ভাই আন্দ্রেই ও বোন তাতিয়ানা—সবাই নিরামিষভোজী। মস্কোর একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সিবেৎলানা স্নাতকোত্তর পড়েছেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার আইনানুযায়ী মস্কোতে তাঁদের বিয়ে হয়। এক মাস আগে ভারতের মায়াপুর ঘুরে ধর্মকান্ত সিবেৎলানাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিছুদিন নিজের গ্রামের বাড়িতে থেকে চলে আসেন শেরপুরের ইসকন মন্দিরে।

বিয়ের পর সিবেৎলানা ওরফে সুশ্রী দেবদাসী বলেন, বিয়ের এমন আয়োজনে তিনি অভিভূত। এটি তাঁর কাছে অকল্পনীয় ছিল। এ বিয়ের আয়োজনে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

ধর্মকান্ত সরকার বলেন, সিবেৎলানার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। মস্কোর ওই মন্দিরের গুরুদেবের সিদ্ধান্তেই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। এখন কিছুদিন স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে থাকবেন। এরপর ভারতের মায়াপুর ও বৃন্দাবন হয়ে মস্কোতে ফিরে যাবেন তিনি।

ইসকন, শেরপুর শাখার অধ্যক্ষ উত্তম শ্যাম দাস বলেন, ধর্মকান্ত আর রুশ কন্যা সিবেৎলানার বিয়ের বিষয়টি শেরপুরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিই তা প্রমাণ করে। এ বিয়ের মাধ্যমে নবদম্পতি মানবসেবায় নিজেদের আরও গভীরভাবে যুক্ত করতে পারবেন।বিয়ের আসরে ধর্মকান্ত সরকার ও রুশ কন্যা সিবেৎলানা।

Categories: চিত্র-বিচিত্র

Leave A Reply

Your email address will not be published.